খায়রুল আলম

অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে সবেমাত্র। ভোটে জিতে ক্ষমতায় এসেছে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট। ২০০১ সালের ঘটনা। গদিতে বসতে দেরি। কিন্তু অত্যাচারের স্টিম রোলার চালাতে দেরি হয়নি বিএনপি জামায়াতের দলীয় ক্যাডারদের। আর সেই নৃশংস অত্যাচারের শিকার সবচেয়ে বেশি হয়েছিল হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা। ধরে নেয়া হয় যে, হিন্দু বা সংখ্যালঘু ভোটারেরা আওয়ামী লীগের ভোটব্যাংক, একারণেই তাদের ওপর ক্ষোভটা বেশি ঝেড়েছিল প্রতিপক্ষ দলটার কর্মীদের অনেকে।

তবে এদের মধ্যে সবচেয়ে নৃশংস আর হৃদয়বিদারক গল্পটা পূর্ণিমা রানী শীলের। ২০০১ সালে পূর্ণিমার বয়স ছিল মাত্র তেরো বছর, ক্লাস এইটের ছাত্রী ছিল এই মেয়েটা। সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় ওদের বাড়ি, সেখানেই একটা স্কুলে তখন পড়তো সে। ২০০১ সালের ৮ অক্টোবর রাতটা হয়তো সারাজীবনের জন্যে দুঃস্বপ্নের এক কালরাত্রি হয়ে আছে। সেই রাতে স্থানীয় বিএনপি-জামায়াত ক্যাডারেরা হামলা করেছিল তাদের বাড়িতে। পূর্নিমা সেই রাতে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার বাড়িতেই ছিল। সদ্য বিজয়ী স্থানীয় নেতারা হামলা করলো মায়ের সামনেই ধর্ষণ করলো তাকে । এত মানুষ দেখে পূর্নিমার মা বলছিলো “বাবারা, আমার মেয়েটা ছোট তোমরা একজন একজন করে এসো, আমার মেয়ে মরে যাবে।”

আসলেও তাই, ওতটুকু মেয়ে, ১০-১২ জনের এক দল যদি পালাক্রমে ধর্ষণ করে, তবে মেয়ের বাঁচার আশা নিয়েই শংকা করতে হয় । অসহায় বাবা দেখলো মেয়ের ধর্ষণ, মা আকুতি করলো । ধর্ষিতা পূর্নিমা অবশ্য সে রাতে মরেনি । ধর্ষণের গ্লানি নিয়ে এখনো তিনি বেঁচে আছেন।

ঘটনার ৩/৪ দিন পর ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি নির্যাতিত পূর্ণিমা ও তার পরিবারকে সাংবাদিদের সামনে হাজির করলে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। কিন্তু সংশ্লিষ্ট এলাকার তৎকালিন এমপি এম আকবর আলী ঘটনাটি সত্য নয় বলে দাবি করেন। জোট সরকারের শাসনামলে পূর্ণিমা তার ওপর হওয়া অন্যায়ের বিচার পাননি, বরং প্রশাসনের কাছ থেকে হুমকি-ধামকি দেওয়া হয় পূর্ণিমার পরিবারকে। তবে পূর্ণিমা হার মানেননি। অবশেষে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ২০১১ সালের ৪ মে অভিযুক্ত ১১ জনকে দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত।

২০০১ সালের ১ অক্টোবর অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। প্রহসনের নির্বাচনে সীমাহীন ভোট কারচুপির মাধ্যমে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগকে পরাজিত করে জয়লাভ করে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি-জামাত জোট সরকার। নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পরপরই আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের হত্যা, সংখ্যালঘু নির্যাতন ও নারী নির্যাতনের মতো বর্বর কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয় বিএনপি-জামাত জোটের সন্ত্রাসীরা।

ছবি রানীর কথা মনে আছে? তিনি আওয়ামী লীগের কর্মী ছিলেন। বাড়ি বাগেরহাটের রামপালে। ২০০২ সালের ২১ আগস্ট তৎকালীন জোট বাহিনীর ক্যাডার দ্বারা গণধর্ষণের শিকার হন তিনি। তৎকালীন ক্ষমতাসীন ক্যাডাররা ছবি রানীকে বাসস্ট্যন্ড থেকে কাপড় খুলে ফেলে। এরপর তাকে বিএনপি অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়। এর পর একের পর এক ক্যাডার দ্বারা তিনি ধর্ষণের শিকার হতে থাকেন। ধর্ষকরা ধর্ষণ করে ছবি রানীর গোপন অঙ্গে মরিচের গুড়া, বালি আর কাচের গুড়া ঢুকিয়ে দেয়। ছবি রানী যখন ধর্ষিত হচ্ছিল তখন পাশের দোকানে পুলিশ সদস্যরা বিড়ি ফুঁকছিল। তার চিৎকারে সাধারন মানুষ তো দূরে থাক, পুলিশ ও সেদিন ফিরেও তাকায়নি ।

এভাবেই অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর চলে অবর্ণনীয় নির্যাতন। এ নির্যাতনের অনেক ঘটনা রয়ে গেছে আড়ালে, অনেকে মামলা করেছে। অনেকে সে সাহসও পায়নি। অনেকে আবার লোকলজ্জা ও সামাজিকভাবে হেয় হওয়ার ভয়ে ধর্ষণের ঘটনাও গোপন রেখেছে। এ জাতীয় অসংখ্য ঘটনা রয়ে গেছে লোকচক্ষুর অন্তরালে। দ্বীপজেলা ভোলার চরফ্যাশন উপজেলায় অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর প্রায় দুই মাস যাবত চলে আওয়ামী লীগ কর্মী-সমর্থক, বিশেষে করে সংখ্যালঘু পরিবারের ওপর অমানুষিক নির্যাতন।

বিভিন্ন স্থানে বিএনপি, জামায়াত ক্যাডাররা নারী ধর্ষণ, সংখ্যালঘুদের জায়গা জমি দখল, হত্যাসহ নানা অপকর্মে মেতে ওঠে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ বিভিন্ন সূত্রের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে জানা গেছে, ২০০১ সালের নির্বাচনকে ঘিরে বিএনপি-জামায়াত জোট হিন্দুদের উপর তাণ্ডব চালায়।

কারণ তাদের বিশ্বাস ছিলো যে হিন্দু ধর্মাবলম্বী ভোটারেরা আওয়ামী লীগকেই ভোট দেবে। নির্বাচনের পরের অবস্থা ছিলো আরো পরিকল্পিত, ছকবদ্ধ এবং গুরুতর। সেসময় বিএনপি জোটের হামলায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ছিলো বরিশাল, ভোলা, পিরোজপুর, খুলনা, সাতক্ষীরা, গোপালগঞ্জ, বাগেরহাট, যশোর, কুমিল্লা ও নরসিংদী। ওই সময় আক্রমণকারীরা হিন্দুদের বাড়িতে ঢুকে তাদের পরিবারের সদস্যদের মারধর, সম্পত্তি লুটপাট এবং অনেক হিন্দু নারীদের ধর্ষণ করে। পাওয়া গেছে হিন্দু মেয়েদের অপহরণের খবরও।

১০ অক্টোবর ২০০১ সালে মুন্সিগঞ্জ জেলার বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ সমর্থক ও সংখ্যা লঘুদের ওপর হামলা চালায় বিএনপি-জামায়াত কর্মীরা। ১২ অক্টোবর ২০০১ সালের গৌরনদী,আগৈলঝাড়ায় নির্বাচনী বিজয়ের পাশবিক উল্লাস, প্রশাসন নীরব। অষ্টম জাতীয় সংসদের নির্বাচনের আগেই বরিশালের গৌরনদী আগৈলঝাড়ায় যে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন ও সন্ত্রাস শুরু হয়, নির্বাচনের পর তা আরো বেড়ে গেছে। ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে অন্তত ৫০টি।

৭ নভেম্বর ২০০১ সালের চট্টগ্রামের মীরসরাই উপজেলার মিঠানালার দাসপাড়ায় সোমবার মধ্যরাতে বিএনপি সন্ত্রাসীদের হামলায় আওয়ামী লীগ কর্মী সুনীল দাস সাধু নিহত হয় এবং প্রায় ৩০ জন নারী ও শিশু আহত হয়েছে।ধর্ষণ, হামলা ও লুটপাটে ৫১টি ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাড়িঘর লুটপাট, জোরপূর্বক চাঁদাবাজি, এমনকি নারী ধর্ষণের অজস্র ঘটনা ঘটে এ সময়। এসবের অধিকাংশই পুলিশের নথিভুক্ত হয়নি। অধিকাংশ ভুক্তভোগীরা ভয়ে কোনো অভিযোগ পর্যন্ত করেনি। রাজিহারের শেফালী সরকার নামটি হয়ত আমরা অনেক জন শুনেছি। গ্রামের মানুষের কাছে আরেকটি পরিচয় ছিল, ‘ঘরের ডাক্তার’। টুকটাক চিকিৎসা দিতেন গরিব মানুষদের। নির্বাচনে কাজ করেন আওয়ামী লীগের পক্ষে। এটাকে গুরুতর অপরাধ হিসেবে গণ্য করে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর কর্মীরা। তাকে চায়নিজ কুড়াল দিয়ে কোপানো হয়।

উত্তর চরফ্যাশন গ্রামের বলরাম দাসের স্ত্রী কণিকা রানী দাস,তাদের বাড়িতে ২০০১ সালের ৩ অক্টোবর রাতে বিএনপি জামায়াতের সন্ত্রাসী দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে আক্রমণ করে মালামাল লুট করে এবং তার সম্ভ্রমহানি ঘটায়। এছাড়া স্বামী-স্ত্রী দু’জনকেও শারীরিক নির্যাতন চালায়। অমর চন্দ্র দাসের স্ত্রী কল্যাণী দাস, গভীর রাতে বিএনপির সন্ত্রাসীরা তাদের বাড়িতে এসে ধান-চাল,জামাকাপড়সহ বাড়ির সকল মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করে। এ সময় তারা তার মেয়ের খোঁজ করে এবং মেয়েকে তাদের হাতে তুলে দিতে বলে। কিন্তু মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে এবং সেখানে নেই, এ কথা শুনে বিএনপি জামায়াতের সন্ত্রাসীরা ক্ষিপ্ত হয়ে স্বামীর সামনে কল্যাণীকে ধর্ষণ করে। ২০০১ সালে বাগেরহাটের যাত্রাপুরের ঠাকুর বাড়িতে এক রাতে ২৩ জন গৃহবধূকে বিএনপির ক্যাডাররা ধর্ষণ করে এবং সেখানে দুটো হত্যাকাণ্ড ঘটায়। বিএনপির আমলে ছয় শতাধিক সংখ্যালঘু পরিবারের সদস্য প্রাণ হারায়, আহত হয় ৩০ হাজারেরও বেশি মানুষ, ১২ হাজার মানুষ পঙ্গুত্ববরণ করে।সংঘবদ্ধভাবে হামলা, নির্যাতন, লুটতরাজে নিঃস্ব হয় লক্ষাধিক হিন্দু পরিবার।

কানাডার ইমিগ্রেশন এবং শরণাথী বোর্ডের গবেষণা অধিদপ্তরের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০০১ সালের ১ অক্টোবর বাংলাদেশে নির্বাচনের সময়কালে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর সহিংসতার ঘটনাগুলো বিবিসি (১০ অক্টোবর ২০০১), গাল্ফ নিউজ (১২ ফেব্রুয়ারি ২০০২), প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়া (২০ অক্টোবর ২০০১), এবং প্যাক্স ক্রিস্টি (২৬ নভেম্বর, ২০০১) ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ পায় । ওই রিপোর্টে বলা হয়, ঘটনাগুলোতে ধর্ষণ, নির্যাতন, হত্যা ও লুটপাটের পাশাপাশি হিন্দুদের ঘরবাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। সহিংসতার শিকার হয়ে শত শত হিন্দু পরিবার সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে পালিয়ে যায়।

বিগত ′বিএনপি – জামাত′ জোট সরকার আমলে তাদেরই শীর্ষ পর্যায়ের নীল নকশা অনুযায়ী ২৭ জানুয়ারী ২০০৫ হবিগঞ্জে ′গ্রেনেড′ হামলা করিয়ে সাবেক অর্থমন্ত্রী কিবরিয়াকে বর্বরভাবে খুন করা হলো। সেই মুহুর্তে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে জরুরীভাবে মুমূর্ষু কিবরিয়াকে ঢাকায় নিয়ে আসার জন্য একটি হেলিকপ্টার চেয়ে সরকারের কাছে বারংবার অনুরোধ করা হয় । কিন্তু তৎকালিন প্রধানমন্ত্রী ′খালেদা জিয়া′ ও তার প্রশাসন তাৎক্ষনিকভাবে সেখানে কোনো হেলিকপ্টার পাঠায় নাই। ওই সময়টাতে ওরা ছিল তখন পৈশাচিক উল্লাসে বিভোর। ২১ আগস্টেও তারা একইভাবে তৎকালিন বিরোধী দলীয় নেত্রী ′শেখ হাসিনা′কে হত্যা করতে চেয়েছিলো !

বিএনপি জামায়াতের ২০০১-২০০৬ সালের শাসনামলের শতাব্দীর জঘন্যতম নৃশংসতায় নির্মমভাবে ঘুমন্ত অবস্থায় অধ্যক্ষ গোপাল কৃষ্ণ মুহুরীকে মাথার মগজ বের করে করে হত্যা, ঘুমন্ত অবস্থায় ১১ দিনের শিশু কার্তিকশীলদের ১৭ সদস্যের গোটা পরিবারকে ঘরে তালা মেরে গান-পাউডার দিয়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে হত্যা, মায়ের হাত থেকে কেড়ে নিয়ে পূর্ণিমা, ইয়াসমিনদের মত গ্রাম-গঞ্জের হাজার হাজার মেয়েকে নির্যাতন এবং গণধর্ষণের লোম শিউরে উঠা সন্ত্রাসের ঘটনার, নিজ নিজ এলাকার সাধারণ আওয়ামীলীগ নেতা-কর্মী-সমর্থকদেরকে এলাকা থেকে বিতাড়িত করণ, সম্পত্তি-দখল, বাড়ি-ঘরে অগ্নি সংযোগ, অন্তত ৬৫ জন সাংবাদিককে হত্যা-নির্যাতন-নিপীড়ন, সাবেক সফল অর্থমন্ত্রী শাহ এমএস কিবরিয়া এমপি , নাটোরের মমতাজ উদ্দিন এমপি , গাজীপুরের আহসানউল্লাহ মাস্টার এমপি, খুলনার মনজুরুল ইমাম এমপি, নড়াইলের আমজাদ হোসেন এমপি কে গ্রেনেড মেরে হত্যা, তৎকালীন ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীকে গ্রেনেড মেরে হত্যার চেষ্টা, ২৪ আগস্টে অসংখ্য আর্জেস গ্রেনেড মেরে ( যিনি পরবর্তিতে ফাস্ট লেডি হতেন বেঁচে থাকলে ) আওয়ামী লীগ নেত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জনকে হত্যা, দেশের ৫০০ স্থানে একযোগে বোমা হামলা, আদালতে আইনজীবী এবং বিচারককে হত্যা ইত্যাদি এর আরও হাজার রকমের জঙ্গি আক্রমন, অপহরণ, গুম, খুন , লুটপাট, অগ্নি-সংযোগের মত নৃশংস ঘটনা, চোখের সামনে ভেসে উঠলো।

২০০১ সালের নির্বাচন পরবর্তী সময়ে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ও আওয়ামী লীগ সমর্থকদের ওপর বিএনপি-জামায়াতের চারদলীয় জোট ক্যাডারদের হামলা, মামলা, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণ, খুন ও লুটের ঘটনা ছিল বহুল আলোচিত ঘটনা। সূত্রমতে, ওই সময় বিএনপি ও জামায়াত ক্যাডারদের তান্ডব ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময়কার পাক সেনাদেরও হার মানিয়েছিল। সেই সন্ত্রাসীরা এখনও সংখ্যালঘু নির্যাতনে তৎপর রয়েছে।

ওইসব সন্ত্রাসীদের মধ্যে কেউ কেউ আবার বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের তকমা লাগিয়ে এখন সংখ্যালঘু কিংবা আওয়ামী লীগের দুর্দিনের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের দমনে কাজ করে যাচ্ছে এমন অভিযোগ রয়েছে। ২০০১ সালের নির্বাচন পরবর্তী সময়ের নির্মম নির্যাতনের ঘটনাগুলো তদন্তে বর্তমান সরকারের সময় গঠন করা হয়েছিল ‘মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ তদন্ত কমিশন’। ওই কমিশনের কাছে সরাসরি ঘটনার বর্ণনা ও লিখিত অভিযোগ দায়ের করার পরও এখনো কোন বিচার পাননি নির্যাতিতরা।

ক্ষমতায় থাকাকালীন রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় নিজেদের লালিত সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে সংখ্যালঘুদের ওপর নিপীড়নসহ সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল বিএনপি-জামায়াত। ধর্ষণ, বাড়িঘর পুড়িয়ে ফেলা, মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করা, মারধর, হত্যা, উপাসনালয়ে অগ্নিসংযোগ করাসহ বিএনপি-জামায়াতের আমলে (২০০১-২০০৬) সংখ্যালঘুদের ওপর করা নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে।

বিএনপি-জামায়াত শাসনামলে সংখ্যালঘুরা ২৫ হাজারেরও বেশি বার হামলার শিকার হয়েছিল। ভুক্তভোগীরা বিএনপি-জামায়াতের এ কাজগুলোকে ‘মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ’ বলে অভিহিত করেছেন। তাদের আমলে জঙ্গি ও মৌলবাদী শক্তিগুলোকে বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতারা আশ্রয় দিয়েছেন। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় জঙ্গি ও মৌলবাদী শক্তিকে এ দেশে কাজ করার অনুমতি দিয়েছে বিএনপি-জামায়াত। আর তাদের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকার হয়েছেন সংখ্যালঘুরা।

১৯৭৭ সালে জেনারেল জিয়াউর রহমানের অধীনে বিএনপি প্রতিষ্ঠার পর এ দেশের অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির মূল নীতিগুলি ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। পরবর্তীতে জিয়ার উত্তরসূরিরা এ ধারাকে অব্যাহত রেখেছে। যা বাংলাদেশকে একটি সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে পরিণত করছে।

লেখক: যুগ্ম সম্পাদক, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)