বিশেষ প্রতিনিধি

খুব বেশি না, এক তথ্যে তোলপাড় হয়ে গেছে বিশ্ব। সন্তান প্রসবের সময়ও বন্দি কৃষ্ণাঙ্গ নারীদের শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয় যুক্তরাষ্ট্রের কারাগারগুলোতে। আর পুরুষদের অমানবিকভাবে শ্রমে বাধ্য করা হয়। বিশ্বজুড়ে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার স্লোগান দিয়ে বেড়ানো দেশ যুক্তরাষ্ট্রের কারাগারের এই চিত্র উঠে এসেছে জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে। রয়টার্সে প্রকাশিত এই প্রতিবেদন প্রশ্ন জাগায়- যে দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়, সেই দেশ অন্য দেশে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় চোখ রাঙায়?

প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্রের কারাবন্দিদের পরিস্থিতিকে ‘মানুষের মর্যাদার প্রতি সুস্পষ্ট অবমাননা’ হিসেবে বর্ণনা করে ‘পদ্ধতিগত বর্ণবাদী’ বিচার ব্যবস্থা সংস্কারের আহ্বান জানান মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা। এপ্রিল ও মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রের পাঁচটি শহরের ১৩৩ জন ব্যক্তির সাক্ষ্য এবং পাঁচটি ডিটেনশন সেন্টার পরিদর্শন করে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি হয়েছে এই প্রতিবেদন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কারাগারগুলোতে বন্দি কৃষ্ণাঙ্গদের মানবেতর অবস্থায় দিনযাপন করতে হয়। সন্তান প্রসবের সময়ও বন্দি নারীদের শিকলে বেঁধে রাখা হয়। এ কারণে ভূমিষ্ঠ শিশুরা অনেক সময়ই মারা যায়। কেবল কৃষ্ণাঙ্গ নারীদের সঙ্গেই এমন ঘটনা ঘটেছে। উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের কারাগারের অবস্থা নিয়ে গত কয়েক দশক ধরেই উদ্বেগ ছিল। যেসব কারাগারের রেকর্ড খারাপ, সেগুলো সংস্কার বা বন্ধ করে দেওয়ার দাবি দীর্ঘদিন ধরেই করে আসছিল মানবাধিকার সংগঠনগুলো।

জাতিসংঘ নিযুক্ত তিনজন বিশেষজ্ঞের তৈরি করা এই প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্রের কারা কর্তৃপক্ষের জন্য ৩০টি সুপারিশও করা হয়েছে। সে সঙ্গে আফ্রিকান বংশোদ্ভূত কারাবন্দিদের ক্ষতিপূরণের দেওয়ার জন্য একটি নতুন কমিশন গঠনের আহ্বানও রয়েছে।

চলুন দেখে আসি তারা লুইজিয়ানার এক কারাগারের বন্দিদের বিবরণ কীভাবে দিচ্ছেন। সেখানে বলা হয়েছে, হাজার হাজার কৃষ্ণাঙ্গ পুরুষ বন্দিকে ক্ষেতে কাজ করতে বাধ্য করা হয়। ঘোড়ার পিঠে বসে থাকা কোনো শ্বেতাঙ্গ তাদের নজরদারিতে রাখেন, যেমনটি দেখা যেত দেড়শ’ বছর আগে। লুইজিয়ানার ‘কুখ্যাত’ অ্যাঙ্গোলা কারাগারের এই পরিস্থিতিকে ‘দাসপ্রথার বর্তমান রূপ’ হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়েছে প্রতিবেদনটিতে।

সেখানে এখনও আছে নির্জন কারাবাস। নির্জন কারাবাসের ব্যাপক ব্যবহার নিয়েও শঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিন বিশেষজ্ঞ। প্রতিবেদনে তারা জানান, আফ্রিকান বংশোদ্ভূত কয়েদিদের নির্বিচারে নির্জন কারাবাসে রাখা হচ্ছে। মানবাধিকার বিশেষজ্ঞদের কাছে এক কৃষ্ণাঙ্গ বন্দি বলেন, টানা ১১ বছর তাঁকে নির্জন কারাবাসে রাখা হয়। তিন বিশেষজ্ঞের একজন হুয়ান মেন্দেজ বলেছেন, ‘আমাদের গবেষণার ফলাফলগুলো অতি দ্রুত বর্তমান এই অবস্থার ব্যাপক সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার দিকে নির্দেশ করে। আমরা বেশকিছু সুপারিশ দিয়েছি।’

রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, জেনেভায় যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক মিশন এই প্রতিবেদন সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। ফেডারেল ব্যুরো অব প্রিজন বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের কারাগারগুলো বন্দিদের পাশাপাশি কর্মচারি এবং জনসাধারণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।