পার্থ সারথী দাশ
“উদয়ের পথে শুনি কার বাণী
ভয় নাই,ওরে ভয় নাই
নিঃশেষে প্রাণ,যে করিবে দান
ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই।”
১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নির্বিচার হত্যা,ধ্বংস ও পৈশাচিকতার বিরুদ্ধে ৯ মাসের মরনপণ লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন বাংলাদেশের, জন্ম হয় লাল-সবুজের পতাকা।সাম্য,মৈত্রী ও স্বাধীনতার মহান মন্ত্রের উচ্চারণে বিশ্বমানচিত্রে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়েছিল,যে অধ্যায়ের নাম বাংলাদেশ।যে অধ্যায়ের রচয়িতা একজন অদ্বিতীয় জনমানুষের কবি ও বাঙালির রাখাল রাজা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
বাংলাদেশের সভ্যতার ইতিহাস চার সহস্রাব্দেরও বেশি সময় থেকে চলে আসছে।প্রারম্ভিক ইতিহাসে একে একে চলে এসেছে হিন্দু -বৌদ্ধদের দ্বন্দ্ব ও প্রতিযোগিতা। ষষ্ঠ থেকে সপ্তম শতাব্দীতে এ অঞ্চলে ইসলামের আগমন ঘটে। ত্রয়োদশ শতাব্দীর প্রারম্ভে বখতিয়ার খিলজীর নেতৃত্বে সামরিক বিজয়। চতুর্দশ শতাব্দী থেকে এই অঞ্চল “শাহী বাংলা” হিসেবে সুলতান শামসুদ্দীন ইলিয়াস শাহ কর্তৃক শাসিত হয়।পরবর্তীতে এই অঞ্চলটি মুঘল সাম্রাজ্যের অধীনে আসে।অষ্টাদশ শতাব্দীর শুরুতে মুঘল সাম্রাজ্যের পতনের পর বাংলার নবাবদের অধীনে একটি আধা স্বায়ত্তশাসিত রাষ্ট্রে পরিণত হয় যার শাসনভার শেষ পর্যন্ত নবাব সিরাজউদ্দৌলার হাতে ন্যস্ত হয়।তারপর ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধে মীরজাফরের বিশ্বাসঘাতকতায় সিরাজউদ্দৌলার পরাজয়ের মধ্য দিয়ে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এ অঞ্চল দখল করে।১৯৪৭ সালের আগষ্ট মাসে বাংলা ও ভারতের পৃথকীকরণের মাধ্যমে আধুনিক বাংলাদেশের সীমানা প্রতিষ্ঠিত হয়,যখন উপমহাদেশের ব্রিটিশ শাসনের অবসানের ফলে এই অঞ্চলটি নবগঠিত পাকিস্তান রাষ্ট্রের অংশ হিসেবে পূর্ব পাকিস্তানে পরিণত হয়।
মুক্তির নেশায় দ্বি-জাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ভারত-পাকিস্তান সৃষ্টি হলেও,বাঙালির কোনো মুক্তি হয়নি।নবগঠিত রাষ্ট্র পাকিস্তানের কোনো সুষ্ঠু শাসনতন্ত্র দাঁড়ায়নি। কারণ একটি ব্যর্থ সামরিক শাসনের অধীনেই পরিচালিত হয়েছিল পাকিস্তান নামের রাষ্ট্রটি,যা পাকিস্তান রাষ্ট্রের মূল উদ্দেশ্যকে ব্যাহত করে।জন্মের পরপরই পাকিস্তান সামরিক জান্তা বাঙালিদের ভাষা-সংস্কৃতির উপর প্রথম আঘাত হানে।বাঙালি জাতিকে দাবিয়ে রাখতে হেন প্রচেষ্টা নেই;যা পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী করেনি।আমরা কোন আগ্রাসনের কথা লিখবো? ১৯৫২,৬২,৬৯,৭০,৭১ প্রতিটি সালে রয়েছে বাঙালির রক্তের ইতিহাস।
“বিশ্ব আজ দুভাগে বিভক্ত,শোষক আর শোষিত।আমি শোষিতের পক্ষে।”উক্তিটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের। বাংলাদেশের স্বাধীনতার মহান স্হপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্বব্যাপী একজন মুক্তিসংগ্রামী এবং মহান রাজনীতিবিদ হিসেবে সমধিক পরিচিত।তিনিই বাঙালির শ্রেষ্ঠতম জাতীয়তাবাদী নেতা।বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ প্রকৃত অর্থে অভিন্ন ও একাত্ম।বঙ্গবন্ধু আলাদা কোন স্বত্ত্বা নন।বঙ্গবন্ধু মানেই বাংলাদেশ ;আর বাংলাদেশ মানেই বঙ্গবন্ধু। ৪৭ এর দেশভাগ থেকে ৫২ এর শহীদের রক্তখচিত বর্ণমালা,৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান থেকে ৭১ এর প্রলয়ংকারী মুক্তির সংগ্রাম,ডিসেম্বরের বিজয়,একজন বঙ্গবন্ধু ও একটি বাংলাদেশ। এদেশের প্রতিটি ধূলিকণায় শহীদের রক্ত,মা-বোনের ত্যাগ,তদুপরি এই লাল-সবুজ পতাকা এবং আমাদের বঙ্গবন্ধু এক সুতোয় গাঁথা।
১৯৭১ সালের ৭ই মার্চের সেই অগ্নিঝরা কালজয়ী ভাষণের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু সেদিন সমগ্র বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন। পৃথিবীর কোন ব্যক্তির একক স্বাধীনতার ঘোষণা এতটা আলোড়ন তুলতে পারেনি,যা পেরেছিলো বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা। তাঁর সেই ভাষণে মুসলমান,হিন্দু, খ্রিস্টান,বৌদ্ধ, নারী-পুরুষ,ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বাঙালি জাতি ঐক্যবদ্ধভাবে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে ছিনিয়ে এনেছিল স্বাধীনতার লাল- সূর্য।বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন ” রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরো দেব।এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো,ইনশাআল্লাহ।” আমরা যদি পেট্রিক হেনরির ‘Give me liberty or give me death'( ১৭৭৫),আব্রাহাম লিঙ্কনের ‘Gettysburg Address'(১৮৬৩)Ô,উইনস্টন চার্চিলের ‘We shall fight on the beaches'(১৯৪০),কিংবা মার্টিন লুথার কিংয়ের ‘I have a dream'(১৯৬৩) ভাষণ জাতিকে জাগ্রত করতে পেরেছিলেন, কিন্তু কোন জাতিরাষ্ট্র সূচনা করতে পারেনি।সেইদিক থেকে বিশ্লেষণ করলে ৭ই মার্চের ভাষণ ছিল আপামর জনগণের মুক্তির ডাক,স্বাধীনতার ডাক।তদুপরি স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম।
হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার মতো জাতির সমগ্র জাতিকে এক করেছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন একটি ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত,অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে।শেখ মুজিব যখনই দেখেছেন বাংলার এই ভূখণ্ড শাসক ও শোষকগণের কাছে শুধুই শোষণ,বঞ্চনা ও নিষ্পেষণের এবং যখনই দেখেছেন বাংলার ঐতিহ্য, ভাষা,সংস্কৃতি দলিত হচ্ছে, তখনই তিনি মাথা উঁচু করে অন্যায়ের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছেন,নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেছেন এদেশের মাটি এবং মানুষের জন্য।তাঁর সিদ্ধান্ত অবিচলতা নিয়ে বলতে গিয়ে কিউবার বিপ্লবী নেতা ফিদেল ক্যাস্ত্রো বলেছিলেন- ” আমি হিমালয় দেখিনি,কিন্তু শেখ মুজিবকে দেখেছি। ব্যক্তিত্ব ও সাহসিকতায় তিনি হিমালয়ের মতো।”
১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নির্মমভাবে হত্যার পর খন্দকার মোশতাক নিজেকে দেশের প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করে।দেশি- বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীদের দোসর কর্ণেল ফারুক,রশিদ,মেজর ডালিম,আজিজ পাশা,মোসলেম উদ্দিন,বজলুল হুদা,মহিউদ্দিনসহ একদল কুলাঙ্গার বিপদগামী সেনাসদস্য বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে।এই কুলাঙ্গারগুলো মনে করেছিল,বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করলেই সব শেষ।ওরা হয়তো জানতো না,বঙ্গবন্ধু মানেই বাংলাদেশ। তাইতো কবি অন্নদাশংকর রায় লিখেছেন- “যতকাল রবে পদ্মা যমুনা গৌরি মেঘনা বহমান/ ততকাল রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবুর রহমান।”
১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের যখন নির্মমভাবে হত্যা করা হয়,তখন বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানা জার্মানিতে অবস্থান করছিলেন।যার ফলে তাঁরা নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পান।দেশে জারি হয় সামরিক শাসন।বঙ্গবন্ধুর খুনীরা যখন দেশের ক্ষমতা দখল করে,সে পরিস্থিতিতে শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানার জন্য দেশে ফিরে আসা ছিল অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর আন্তরিক সহযোগিতায় বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানা ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় লাভ করে।
সামরিক শাসকের রক্তচক্ষু ও নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দীর্ঘ ৬ বছর নির্বাসন শেষে বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে শেখ হাসিনা ফিরে আসেন।সেদিন রাজধানী ঢাকা মিছিলের নগরীতে পরিণত হয়।সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ঢাকা শহর মিছিল আর স্লোগানে প্রকম্পিত হয়।দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া আর প্রচন্ড ঝড়-বৃষ্টিও সেদিন লাখো মানুষের মিছিলকে গতিরোধ করতে পারেনি।বঙ্গতনয়া শেখ হাসিনাকে এক নজর দেখতে সেদিন সারা বাংলাদেশের মানুষের গন্তব্য ছিল রাজধানী ঢাকা।স্বাধীনতার অমর স্লোগান ‘জয় বাংলা,জয় বঙ্গবন্ধু ‘ধ্বনিতে মুখরিত ছিল বাংলার আকাশ- বাতাস।
দেশে ফিরে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও স্বপ্ন বাস্তবায়নে দৃঢ় অঙ্গীকার, বঙ্গবন্ধু হত্যা ও জাতীয় চার নেতা হত্যার বিচার,স্বৈরতন্ত্রের চির অবসান ঘটিয়ে জনগণের হারানো গণতান্ত্রিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা, সার্বভৌম সংসদীয় পদ্ধতির শাসন ও সরকার প্রতিষ্ঠার শপথ নিয়ে আওয়ামীলীগের সভাপতি হিসেবে দ্বায়িত্বভার গ্রহণ করেন শেখ হাসিনা।১৯৮১ সালের ১৭ মে ঝড়-বাদল আর জনতার আনন্দাশ্রুতে অবগাহন করে শেরে বাংলা নগরে লাখো জনতার সংবর্ধনায় শেখ হাসিনা বলেছিলেন “আমার আর হারাবার কিছুই নেই।পিতা-মাতা,ভাই রাসেল সকলকে হারিয়ে আমি আপনাদের কাছে এসেছি,আমি আপনাদের মাঝেই তাদেরকে ফিরে পেতে চাই।আপনাদের নিয়েই আমি বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে তা বাস্তবায়ন করে বাংলার দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চাই,বাঙালি জাতির আর্থ- সামাজিক তথা সার্বিক মুক্তি ছিনিয়ে আনতে চাই।”
শৈশব থেকে আজ অব্দি সুদীর্ঘ পথপরিক্রমা,শেখ হাসিনার কখনোই কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না।কণ্টকাকীর্ণ পথ পেরিয়ে পৌঁছেছেন আজকের অবস্হানে,দেশের মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার এক অতন্দ্র প্রহরী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা।১৯৮১ সালে দেশে ফিরে আসার পর,শেখ হাসিনাকে ১৯ বার হত্যা চেষ্টা করা হয়েছে।সৃষ্টিকর্তা নিজ হাতে প্রতিবারই উনাকে বাঁচিয়েছেন। শেখ হাসিনা সংকটকে সম্ভাবনায় রূপ দেন।তিনি ধ্বংসস্তুপের মাঝে থেকে ওড়ান সৃষ্টির পতাকা, আর মৃত্যুর মিছিলে দাঁড়িয়ে গেয়ে যান জীবনের জয়গান।”বাংলাদেশের পুনরুত্থান ও শেখ হাসিনার সংগ্রাম”লেখায় হারুন হাবীব লিখেছেন,শেখ হাসিনার শাসনামলে মোড় ঘোরানো মৌলিক স্তরগুলোকে মূলত চারভাগে ভাগ করেছেন।প্রথমত,জাতীয় মুক্তিযুদ্ধের গৌরব পুনরুদ্ধার সংগ্রাম ও তার সাফল্য। দ্বিতীয়ত,সামরিক ও আধা সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম-সফলতা।তৃতীয়ত,জাতির পিতার হত্যাকারী ও মুক্তিযুদ্ধের ঘাতক যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্তদের আইনের হাতে সোপর্দ করা।এবং চতুর্থত, অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশকে প্রগতির সড়কে আনা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে খাদ্য নিরাপত্তা, সমুদ্র বিজয়,শিক্ষা,স্বাস্থ্য খাতের অগ্রগতি,নারীর ক্ষমতায়ন, অর্থনৈতিক উন্নতি ইত্যাদিতে ঈর্ষনীয় সাফল্য এসেছে। জঙ্গিবাদের করাল থাবা মোকাবেলা করে জঙ্গিমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে তিনি সক্ষম হয়েছেন।দেশের চলমান কয়েকটি মেগা প্রজেক্ট এ বছরে জনগণের জন্য উন্মুক্ত হলে দেশে আরো দ্রুত উন্নয়নের জোয়ার বইবে এবং জনগণের জীবনযাত্রার মান বাড়বে।
করোনা সংকটে গণভবনে থেকেই পুরোদেশ পরিচালনা করেছেন শেখ হাসিনা।উনার দক্ষ নেতৃত্বের কারণে অর্থনৈতিক সংকট তৈরী হয়নি এবং কেউ না খেয়েও মারা যায়নি করোনার সময়ে।বরং প্রবৃদ্ধি অর্জনে প্রতিবেশী দেশগুলোর চেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশ। দীর্ঘদিন ধরে সরকারে থাকা এবং উন্নয়নমুখী অর্থনীতি নিয়ে কাজ করার ফলে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে মধ্য আয়ের দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে।এখন ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে অদম্য গতিতে এগিয়ে চলছে।
শেখ হাসিনা সরকারের কিছু উল্লেখযোগ্য সাফল্য :
২০০৬ সালে মেয়েদের প্রাথমিক শিক্ষার হার ছিল ৫৪%। বর্তমান সরকারের সময়ে বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৯৮.২৫%। ২০০৬ সালে কৃষি উৎপাদন ছিল ২ কোটি ৬১ লক্ষ টন। বর্তমান সরকারের সময়ে বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৯ কোটি ৮০ লক্ষ মেট্রিক টন। ২০০৬ সালে প্রবৃদ্ধির হার ছিল মাত্র ৫.৪০%। বর্তমান সরকারের সময়ে ২০২৩ সালে বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৭.২৫%। ২০০৬ সালে স্বাক্ষরতার হার ছিল মাত্র ৪৫%। বর্তমান সরকারের সময়ে ২০২৩ সালে ৩০.৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৭৫.৬%। ২০০৬ সালে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ছিল মাত্র ৬৫,৬৭২টি। বর্তমান সরকারের সময়ে বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ১,১৮,৮৯১ টি। ২০০৬ সালে কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ছিল মাত্র ৯টি। বর্তমান সরকারের সময়ে কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সংখ্যা ৯৬টি। ২০০৬ সালে মোট মৎস্য উৎপাদন ছিল ২১.৩০ লক্ষ মেট্রিক টন। বর্তমান সরকারের সময়ে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৩.১৪ লক্ষ মেট্রিক টন। ২০০৬ সালে পোল্ট্রির সংখ্যা ছিল ১৮ কোটি ৬ লক্ষ ২২ হাজার। বর্তমান সরকারের সময়ে তা দাঁড়িয়েছে ৫২ কোটি ৭৯ লক্ষ ১৯ হাজার। ২০০৬ সালে শিশু মৃত্যুর হার ছিল (প্রতি হাজারে) ৮৪ জন। বর্তমান সরকারের সময়ে ২০২৩ সালে ৪ গুণ কমে দাঁড়িয়েছে ২১ জন। ২০০৬ সালে মোট ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ছিল ০.২৩%। বর্তমান সরকারের সময়ে মোট জনগোষ্ঠীর ৭৩.৫৫% ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। ২০০৬ সালে মোবাইল ফোনের সিম ছিল ১৯ মিলিয়ন। বর্তমান সরকারের সময়ে ২০২৩ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮৩.৫৩ মিলিয়ন। ২০০৬ সালে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ছিল ৩৭৮২ মেগাওয়াট। বর্তমান সরকারের সময়ে তা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ২৫২২৭ মেগাওয়াট। গবেষণার সুযোগ সৃষ্টিতে ৭৭৯ জন বাংলাদেশী গবেষককে দেশে ও বিদেশে উচ্চশিক্ষায় ৩১৩ কোটি টাকা বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপ প্রদান করা হয়েছে। গবেষণা ও উন্নয়ন কাজে উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা স্বরুপ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৫,৭০১ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে প্রায় ১৫৮ কোটি টাকা জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপ প্রদান করা হয়েছে। ২০০৬ সালে বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা ভাতা সুবিধাভোগীর সংখ্যা ছিল ৫ লক্ষ ২৪ হাজার জন। ২০২৩ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৫ লক্ষ ৯৮ হাজার জন। ২০০৬ সালে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি ছিল ২১ হাজার ৫ শত কোটি টাকা। ২০২৩ সালে তা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ২ লক্ষ ৭৪ হাজার ৬৭৪ কোটি টাকা। ২০০৬ সালে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ ছিল মাত্র ২ হাজার ৫০৫ কোটি টাকা। ২০২৩ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লক্ষ ২৬ হাজার ২৭২ কোটি টাকা। ২০০৯ সালে খাদ্যশস্য উৎপাদন ছিল ৩ কোটি ২৮ লক্ষ ৯৬ হাজার মেট্রিক টন। ২০২৩ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ কোটি ৭৭ লক্ষ ৬৮ হাজার মেট্রিক টন। বাংলাদেশ কৃষিপণ্য উৎপাদনে রোল মডেল। যেমন: পাট উৎপাদনে ২য়; ধান, সবজি ও পেঁয়াজ উৎপাদনে ৩য়; চা উৎপাদনে ৪র্থ এবং আলু ও আম উৎপাদনে ৭ম। সরকার সারের মূল্য কমিয়ে টিএসপি ৮০ টাকা থেকে ২৭ টাকা, ডিএপি ৯০ টাকা থেকে ২১ টাকা এবং এমওপি ৭০ টাকা থেকে ২০ টাকা করা হয়। ২০০৯ সালে কৃষকের উন্নয়ন সহায়তা (ভর্তুকি) বাবদ ব্যয় হয়েছিল ৫,১৭৮ কোটি টাকা। ২০২৩ সালে ব্যয় বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ২৫,৯৯৮ কোটি টাকা। ২০০৬ সালে প্রতিবন্ধী ভাতা সুবিধাভোগীর সংখ্যা ছিল ১ লক্ষ ৬৬ হাজার ৬০ জন। বর্তমান সরকারের সময়ে তা দাঁড়িয়েছে ২৯ লক্ষ। ২০০৬ সালে বিধবা ভাতা সুবিধাভোগীর সংখ্যা ছিল ৬ লক্ষ ৫০ হাজার। বর্তমান সরকারের সময়ে তা দাঁড়িয়েছে ২৫ লক্ষ ৭৫ হাজার। ২০০৬ সালে ভাতাপ্রাপ্ত হিজড়া জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ছিল ০ (শূন্য) জন। বর্তমান সরকারের সময়ে তা দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৮৮০।
আমরা জানি এবং সমগ্র বিশ্ব জানে,বাংলাদেশের উন্নয়নে শেখ হাসিনার অর্জন তুলনাহীন।শেখ হাসিনার তুলনা শেখ হাসিনা নিজেই।এ যেন বঙ্গবন্ধুর পুনর্জন্ম;যা বঙ্গতনয়ায় প্রতিফলিত হচ্ছে। শেখ হাসিনা একের পর এক নিজের রেকর্ড নিজেই অতিক্রম করে চলেছেন।যে বাংলাদেশকে একসময় তলাবিহীন ঝুড়ি বলে আখ্যায়িত করা হয়েছিল,সেই বাংলাদেশ এখন সমগ্র বিশ্বের রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃত। শেখ হাসিনা এখন শুধু দেশের নেতা নন,উনি এখন বিশ্বনেতা।শেখ হাসিনা এখন শুধু বাংলাদেশের রাজনীতিতেই আলো ছড়াচ্ছেন না,সমগ্র বিশ্ব রাজনীতিতেও তিনি আলো ছড়াচ্ছেন।আসুন সামনের এই নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর কন্যা বঙ্গতনয়া শেখ হাসিনাকে আবারো জয়যুক্ত করে একটি ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত,জঙ্গিমুক্ত অস্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তুলি।একটি পরাধীন জাতিকে যেমন স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু, তেমনি উনার কন্যা বঙ্গরত্ন শেখ হাসিনা এই বাংলাদেশের অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে দিনরাত সেবা করে যাচ্ছেন। তাইতো মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গতনয়া শেখ হাসিনা কবির ভাষায় প্রায়ই বলেন- “যতবারই হত্যা করো জন্মাবো আবার,/ দারুণ সূর্য হবো লিখবো নতুন ইতিহাস”
লেখক: সহকারী অধ্যাপক,ফিশারিজ বিভাগ, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।