ফের হু হু করে বাড়ছে তিস্তার পানি। টানা কয়েকদিনের ভারী বর্ষণের কারণে তিস্তার পানি বেড়ে ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার কাছাকাছি প্রবাহিত হচ্ছে। পানি নিয়ন্ত্রণে ব্যারেজের ৪৪টি জলকপাট খুলে দেওয়া হয়েছে। এতে তিস্তা চরের মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। চর এলাকায় কয়েক হাজার একর আমন ক্ষেত পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষকরা।

রোববার বিকালে ব্যারাজ পয়েন্টে ৫২.০৭ সেন্টিমিটার পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে, যা বিপৎসীমার দশমিক ৮ সেন্টিমিটার নিচে প্রবাহিত হচ্ছে। এর আগে রোববার সকাল ৯টা থেকে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়।

ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় নির্বাহী প্রকৌশলী রাশেদিন ইসলাম বলেন, ‘সকাল থেকে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়ে ৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কয়েকদিনের ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।’

স্থানীয়রা জানান, লালমনিরহাট জেলা ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে শনিবার সকাল থেকে রোববার বিকাল পর্যন্ত টানা ভারী বৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টির পানিতে ডুবে গেছে ফসলের ক্ষেত থেকে খেলার মাঠসহ সর্বত্রই। চারদিকে শুধু পানি আর পানি। বৃষ্টির কারণে লালমনিরহাটের সব নদ-নদীর পানি প্রবাহ বেড়েছে। রোববার পানি বেড়ে বিকাল ৩টায় ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। টানা ভারী বর্ষণের কারণে ডালিয়া পয়েন্টে পানিপ্রবাহ বেড়েছে বলে জানিয়েছে ব্যারেজ কর্তৃপক্ষ।

নদীপাড়ের মানুষজন জানায়, পানি বেড়ে যাওয়ার কারণে তিস্তা নদীর বাম তীরে লালমনিরহাট জেলার নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়েছে। বন্যার শঙ্কায় চিন্তিত তিস্তাপাড়ের মানুষ। চলতি মৌসুমে কয়েক দফায় বন্যা হলেও তা বেশি সময় স্থায়ী ছিল না। মৌসুমের শেষদিকে বড় বন্যার আশঙ্কা করছেন নদীপাড়ের মানুষ।

তিস্তা নদী লালমনিরহাট জেলার দক্ষিণ-পশ্চিম দিয়ে প্রবাহিত। জেলার সবকয়টি উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে চলা তিস্তা নদীতে বন্যা দেখা দিলে তা পুরো জেলাকে দুর্ভোগে ফেলে। তিস্তাপাড়ে বন্যা হলে জেলার ৫টি উপজেলা বন্যা কবলিত হয়ে পড়ে। সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় হাতীবান্ধা উপজেলা।

তিস্তার পানি বৃদ্ধির ফলে ইতোমধ্যে জেলার পাটগ্রামের দহগ্রাম, হাতীবান্ধার গড্ডিমারী, দোয়ানি, সিঙ্গামারি ইউনিয়নের ধুবনী, সিন্দুর্না, পাটিকাপাড়া, ডাউয়াবাড়ী, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, শৈইলমারী, নোহালী, চর বৈরাতি, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা, পলাশী ও সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, কালমাটি রাজপুর, গোকুÐা ইউনিয়নের তিস্তা নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করছে।

হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী ইউনিয়ন পরিষদের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য (মেম্বার) জাকির হোসেন বলেন, ‘তিস্তার পানি বাড়ছে। তবে এখনো কোনো ঘরবাড়িতে পানি ওঠেনি। কিছু কিছু এলাকায় রাস্তা ডুবে গিয়ে চলাচল কষ্টকর হয়ে পড়েছে।’

হাতীবান্ধা উপজেলার সিন্দুর্না ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আরিফুল ইসলাম আরিফ বলেন, ‘ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে চর এলাকার রাস্তাঘাট ডুবে গেছে। চরের লোকজনের খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।’

লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী শুনীল কুমার বলেন, ‘টানা ভারী বর্ষণে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ বেড়েছে। সবগুলো জলকপাট খুলে পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। ২৪ ঘণ্টায় আরও তিস্তার পানি বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’