তীব্র তাপদাহের পর বৃষ্টির আগমনে স্বস্তি ফিরলেও চরম ভোগান্তির শিকার নীলফামারীর সৈয়দপুরবাসী। ড্রেনেজ ব্যবস্থার অচলাবস্থার কারণে তুমুল বর্ষণের পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় যেমন শহরের লোকজন দুর্ভোগে পড়েছেন তেমনি সমস্যায় নিপতিত সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে বসবাসকারীরা। গত তিনদিন ধরে পানিবন্দি অবস্থায় তারা। শনিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) দিনভর বৃষ্টির ফলে তাদের দূরাবস্থা আরও বেড়েছে।
এদিন দুপুরে উপজেলার কামারপুকুর ইউনিয়নের ধলাগাছ আশ্রয়ণে সরেজমিনে গেলে দেখা যায় ১০৮ টি পরিবার দূঃসহ পরিস্থিতির মধ্যে দিনাতিপাত করছেন। ঘরের চারপাশে থৈ থৈ পানি। বারান্দা থেকে বাইরে পা ফেলার জো নেই। প্রয়োজনে কোথাও যেতে হলে হাঁটু পানি মারিয়ে যেতে হচ্ছে। চলাচলের রাস্তাগুলো সব পানির নিচে। এমনকি টিউবওয়েলের পাড়ও তলিয়ে গেছে। উঠানের রান্নাঘরের চুলা ডুবে কাঁদায় পরিণত হয়েছে।
আবাসনবাসী কর্মজীবী হতদরিদ্র মানুষগুলো প্রয়োজনের তাগিদে পানি ডিঙ্গিয়ে কাজে যেতে পারলেও সবচেয়ে কষ্টকর হয়ে পড়েছে শিশুদের চলাফেরা। একদিকে পানিতে পড়ার আশঙ্কা, অন্যদিকে সাপ, পোকামাকড়ের ভয়। তার উপর রান্নার আয়োজন করতে হচ্ছে ঘরের মেঝেতে বা বারান্দায়। এতে সংকীর্ণ জায়গায় খুবই কষ্ট করে সারতে হচ্ছে সব কাজ। সব মিলিয়ে করুণ মানবেতর জীবনযাপন করছে প্রধানমন্ত্রীর উপহার মাথা গোঁজার ঠাঁই প্রাপ্তরা।
শমসের আলীর ছেলে জসিম উদ্দিন (বাসা ৬৫) বলেন, এই আশ্রয়ণের ঘরগুলো নির্মাণের সময় সঠিক পরিকল্পনা করা হয়নি। ধানী নিচু জমিতে কোন মাটি ভরাট না করেই ঘর তৈরী করা হয়েছে। রাস্তা ও উঠান আগের মাটিতেই করায় এবং সেই লেবেলেই ড্রেন বানানোর ফলে সামান্য বৃষ্টিতেই পানি জমে যায়, নিষ্কাশন হয়না। আর বেশি বৃষ্টি হলেতো দিনের পর দিন পানিতে আবদ্ধ হয়ে পড়ে পুরো আশ্রয়ণ। জানিনা কোন আক্কেলে কর্তৃপক্ষ এমন কাজ করেছে।
১০৮ নং বাসায় বসবাসকারী আল তারা বলেন, আমাদের ঘরগুলো পাশের বিশ্বরোড থেকে প্রায় ৫ ফুট নিচু। আবাসনে আসার যে মূল রাস্তা করা হয়েছে সেটা কিছুটা উচু করা হলেও প্রতিটি ঘরের সাথে সংযোগ ওলিগলি পথগুলো একেবারেই তলায়। ড্রেনগুলোও নিচু হওয়ায় ড্রেন দিয়ে উল্টা পানি আঙ্গিনায় আসে। ফলে সারা বছরই পানির জমে থাকে। সবাই অতিরিক্ত ইট বিছিয়ে চলাচল করি। কিন্তু বৃহস্পতিবার থেকে বৃষ্টির পানিতে সেই ইটও তলিয়ে গেছে। আর গতকাল ও আজকের লাগাতার বর্ষণে হাটুপানি। অনেক কষ্টে আছি।
শাহজাদী (বাসা ৭৪) বলেন, তিন দিন ধরে পানির নিচে ডুবে থাকলেও কেউ আমাদের খোঁজ নিতে আসেনি। ঘরে যে সামান্য খাবার ছিল তা শেষ হওয়ায় না খেয়েই কাটছে। চারদিকে পানি থাকায় না পারছি ছোট বাচ্চাদের রেখে কাজে যেতে, না পারছি কারো কাছে হাত পাততে। কঠিন পরিস্থিতিতে পড়েছি। দিন কোনরকমে পার হলেও রাতে বেজায় দুশ্চিন্তায় কাটাচ্ছি।
আনারুল ইসলাম (বাস ৬৭) বলেন, প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পেয়ে বেশ উপকৃত হয়েছি। কিন্তু এমন নিচু জমিতে ঘর করা হয়েছে যে, বর্ষায় ডুবে যায়। চারপাশে যেভাবে পানি জমেছে আর দুই একদিন বৃষ্টি হলে হয়তো ঘরেও ঢুকবে। তখন চরম দূরাবস্থা হবে আশ্রণবাসীর। এখনই রান্না করা ও বিশুদ্ধু পানির সংকট দেখা দিয়েছে। কাজে বা মসজিদে যেতেও হাটুপানিতে ভিজতে হচ্ছে। এমনিতে মশার উপদ্রব্য অস্থির অবস্থা। তার উপর পানির কারণে সাপের উৎপাত বেড়েছে।
একেবারে নিম্নজমিতে দায়সারাভাবে আশ্রয়ণটা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করে তিনি বলেন, অত্যন্ত নিম্নমানের উপকরণে এবং যেনতেন ভাবে কাজ করায় ঘরের মেঝেতে ও দেয়ালে ফাটল সৃষ্টি হয়েছে। বর্ষায় যেমন চাল দিয়ে পানি পড়ে তেমনি চারপাশে পানি থাকলে মেঝেতেও চুইয়ে পানি উঠে। ঘরগুলো বেশিদিন টেকসই হবেনা বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। তিনি বলেন, এমনিতে ধানের কাঁদা জমিতে ভিত না খুঁড়েই ঘর বানানো হয়েছে। তাই অনতিবিলম্বে আবাসনে মাটি ফেলে রাস্তা উঠান ও আঙিনা উচু না করলে এভাবে পানিতে ভিজে ভিজে ঘরের ভিত্তি দূর্বল হয়ে যাবে।
সৈয়দপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: আমিনুর ইসলাম বলেন, আশ্রয়নের বসবাসরত মানুষের পানি বন্দী খোজ খবর নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহন করতে কামারপুকুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ আনোয়ার হোসেন সরকার কে নির্দেশ করছি।
কামারপুকুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ আনোয়ার হোসেন সরকার বলেন, ঘরে পানি এখনও ঢোকেনি। আমি খোঁজ নিয়ে জেনেছি সারারাত বৃষ্টি হলে আশ্রয়নে বসবাসরত লোকজনকে অন্যজায়গায় সরে যেতে হবে।