শহরের প্রধান প্রধান সড়কগুলোতে বড় বড় খানাখন্দ আর সামান্য বৃষ্টিতে ঘন্টার পর ঘন্টা জলাবদ্ধতার কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন নীলফামারীর সৈয়দপুর পৌরবাসী। প্রথম শ্রেণীর
পৌরসভার প্রায় ৮০ ভাগ রাস্তার ভয়াবহ দূরাবস্থায় চলাচল অযোগ্য হয়ে পড়ায় এবং ড্রেনেজ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ায় অসহনীয় দূর্ভোগ পোহাচ্ছেন নাগরিকরা।

বছরের পর বছর ধরে এই সমস্যা বিরাজ করলেও নির্বিকার জনপ্রতিনিধিরাসহ প্রশাসন। ফলে নিস্তার মিলছেনা স্থায়ী হয়ে চেপে বসা এই কষ্ট থেকে। বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টির কারণে সেই কষ্ট আরও বেড়ে গেছে। হাটুপানিতে রাস্তা তলিয়ে থাকায় যেমন পায়ে হেটে চলা যাচ্ছেনা, তেমনি যান বাহনে যেতে গিয়ে খানাখন্দে পড়ে দূর্ঘটনায় নিপতিত হতে হচ্ছে।

সৈয়দপুরের প্রাণকেন্দ্র হলো শহীদ ডা. জিকরুল হক সড়ক। এই সড়কের মদীনা মোড় থেকে বিএনপি অফিস পর্যন্ত ভেঙে এবড়োখেবড় হয়ে পড়েছে। বড় বড় গর্তের কারণে এটুকু পথ চলতে খুবই কষ্ট করতে হয়। অত্যন্ত ব্যস্ততম সড়ক হওয়ায় ভাঙাচুরার কারণে ধীরগতিতে চলায় বা দূর্ঘটনা হওয়ায় প্রায়শই যানজট লেগে যায়।

যা বঙ্গবন্ধু চত্বর, শহীদ তুলশীরাম সড়কসহ শহীদ জহুরুল হক সড়ক পর্যন্ত দীর্ঘ এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। অনেক সময় ধরে এই যানজট বিরাজ করায় ব্যাপক দূর্ভোগ দেখা দেয়। একই অবস্থা শহীদ সামসুল হক সড়কের মাছ বাজার থেকে থ্যাংকস ক্লথ স্টোর মোড় পর্যন্ত। আর শেরে বাংলা সড়কের তামান্না মোড় থেকে ওয়াপদা মোড় পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার পথ যেন জনদূর্ভোগের অপর নাম।

এই পরিস্থিতির মাঝে সামান্য বৃষ্টি হলেই সড়কে হাটু পানি জমে ঘন্টার পর ঘন্টাব্যাপী থৈ থৈ করে। এসময় কোন যানবাহন চলাচল করলে ঢেউয়ের তোড়ে রাস্তার পানি গড়িয়ে দুইপাশের দোকানে ঢুকে পড়ে। নোংরা পানি ও কাঁদা মারিয়ে ক্রেতাসাধারণ ওইসব দোকানে আসতেও পারেনা। ফলে ব্যবসায় করাও দূরহ হয়ে পড়েছে। এই সড়কগুলোর দুইপাশেই মূলতঃ প্রধান মার্কেট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান অবস্থিত। কিন্তু এমন দূরাবস্থায় দোকান মালিকরাসহ গ্রাহকেরা অবর্ণনীয় কষ্টে নিমজ্জিত।

শহীদ সামসুল হক সড়কের তৈরী পোষাক ব্যবসায়ী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, জনদূর্ভোগ লাঘবের জন্যই মূলতঃ জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করা হয়। কিন্তু সৈয়দপুর পৌর পরিষদের জনপ্রতিনিধিরা দীর্ঘ ৩ বছরে কোন কাজই করেননি। বিশেষ করে শহরের প্রধান সড়কগুলোর ভাঙচুর মেরামত করাসহ পানি নিষ্কাশনে কার্যকর কোন ব্যবস্থায়ই নেননি। ড্রেনেজের অবস্থা এতটা অচল যে দশ মিনিটের বৃষ্টির পানিই ঘন্টার পর ঘন্টায়ও সরেনা। আর যদি ঘন্টাখানেক বা দিনভর বৃষ্টি হয় তাহলে দিনের পর দিন হাটুপানি জমে থাকে। কি যে দূর্ভোগ বলার ভাষা নেই।

বাঁশবাড়ী এলাকার আয়মান আলী বলেন, পৌরসভার ১৫ টি ওয়ার্ডের সিংহভাগ সড়কই চলাচলের অযোগ্য। ভেঙেচুরে একাকার। আর রাস্তায় পানিবদ্ধতাতো কিছু কিছু পাড়া মহল্লার জন্য চিরদিনের কান্নায় পরিণত হয়েছে। মুন্সিপাড়া, বাঁশবাড়ী, মিস্ত্রীপাড়া, হাতিখানা এলাকার রাস্তাগুলোতে বছরের অধিকাংশ সময়ই পানি জমে থাকে। বর্ষাকালে যা বন্যায় রুপ নেয়। শুকনা মৌসুমেও ড্রেনের ময়লাযুক্ত নোংরা ও দূর্গন্ধময় পানি বিরাজ করে। এতে যাতায়াতে ভোগান্তি পোহানো সহ অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে রোগাক্রান্তের ঝুঁকির মধ্যে বসবাস করতে বাধ্য হচ্ছে।

মেহের হোসেন নামে একজন এনজিও কর্মী বলেন, সৈয়দপুর ব্রিটিশ আমলে প্রতিষ্ঠিত একটি সুপরিকল্পিত ও সুপরিচ্ছন্ন শহর। স্বাধীনতা উত্তর সময়েও এটি বেশ পরিষ্কার ও স্বাস্থ্যকর ছিল। কিন্তু কিছুদিন হলো যত্রতত্র বস্তি গড়ে ওঠায় এবং প্রয়োজনীয় নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত না করায় অত্যন্ত নোংরা ও দূর্ভোগের নগরীতে পরিণত হয়েছে।

বিশেষ করে ড্রেনেজের দূরাবস্থা, পর্যাপ্ত ডাস্টবিনের অভাবে সড়কের ময়লা আবর্জনার স্তুপ পরিষ্কারে কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা, রাস্তাগুলো সময়মত মেরামত না করায় অবস্থা দিনের পর দিনে আরও মারাত্মক হয়ে পড়েছে। সেই সাথে যানজটে নাকাল পৌরবাসীর জীবন। পৌর মেয়র ও জাতীয় সংসদ সদস্য আলহাজ¦ আদেলুর রহমান আদেল কেউই এই ব্যাপারে সচেতন ও জনদূর্ভোগ দূর করতে উদ্যোগী না হওয়ায় বসবাস অযোগ্য শহরে রুপ নিচ্ছে সৈয়দপুর।

সৈয়দপুর পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি রফিকুর ইসলাম বাবু বলেন, পৌর নির্বাচনের সময় আমরা ভোটারদের দারে দারে ভোট প্রার্থনা করেছিলাম। পৌর ভোটারা আমাদের কথা রেখেছে এবং ভোট দিয়ে বেবীকে মেয়র নির্বাচিত করেছে। কিন্তুু দুঃখ জনক বিষয় হলো ৩বছরে সৈয়দপুর শহরে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগে নাই বরং রাবিস দিয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক সংস্কার করেছেন তা এখন দূর্ভোগে পরিণত হয়েছে।

এব্যাপারে সৈয়দপুর পৌরসভার মেয়র রাফিকা আকতার জাহান বেবীর সাথে যোগাযোগ করা হলেও তাঁর কোন মন্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। তাঁর মুঠোফোনে বার বার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। পৌর সচিব ও নির্বাহী প্রকৌশলীও কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।