শেষ ২ ওভারে ভারতের দরকার ১৭। শুভমান গিলের সেঞ্চুরির পর অক্ষর প্যাটেল ম্যাচ অনেকটাই হাতে নিয়ে এসেছিলেন। টাইগার সমর্থকদের তখন বুক ধুঁকপুক। ৪৯তম ওভারটি করতে আসেন মোস্তাফিজুর রহমান। প্রথম স্পেলে ভালো না করলেও ডেথে দুর্দান্ত কাটার মাস্টার।
৪৯তম ওভারে মাত্র ৫ রান দিয়ে ২টি উইকেট তুলে নেন ফিজ। আউট করেন ৩৪ বলে ৪২ করে বাংলাদেশের হাত থেকে ম্যাচ ছুটিয়ে নিতে চাওয়া অক্ষরকেও।
শেষ ওভারে জিততে ১২ দরকার ভারতের। অভিষিক্ত পেসার তানজিম তামিমের হাতে বল তুলে দেন সাকিব। তানজিদ প্রথম তিন বলে রান আটকে রাখেন। চতুর্থ বলে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ম্যাচ জমিয়ে তুলেন মোহাম্মদ শামি। পঞ্চম বল ফাইন লেগে ঠেলে দুই নিতে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তানজিদ তামিমের দুর্দান্ত থ্রোতে উইকেট ভেঙে দেন লিটন দাস। বাংলাদেশ শিবিরে উচ্ছ্বাস।
ভারতের বিপক্ষে ৬ রানের দুর্দান্ত এক জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে সাকিব আল হাসানের দল। এতে করে এশিয়া কাপ মিশন শেষ হলো জয় দিয়ে, সেটাও আবার টুর্নামেন্টের সেরা দলকে হারিয়ে।
কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে ভারতের সামনে বাংলাদেশ ছুড়ে দিয়েছিল ২৬৬ রানের চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্য। মাঝারি পুঁজি নিয়ে দারুণ বোলিং করে টাইগাররা। একশর আগে (৯৪ রানে) ভারত হারায় ৪ উইকেট।
তানজিম সাকিবের আজই অভিষেক হয়েছে আন্তর্জাতিক আঙিনায়। নিজের দ্বিতীয় বলে উইকেট নিলেন রোহিত শর্মার মতো ব্যাটারের। এরপর তিলক ভার্মা পরাস্ত হলেন দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে। বল ছেড়ে দিয়ে বোল্ড হলেন তিলক। তানজিম সাকিবের জন্য এর চেয়ে সুন্দর শুরু আর কী হতে পারতো!
প্রথম ওভারের দ্বিতীয় রোহিত শর্মা (০) ড্রাইভ খেলতে গিয়ে ধরা পড়েন কভার পয়েন্টে। এরপর তানজিম সাকিব নিজের পরের ওভারে বোল্ড করেন তিলককে (৫)। যে বলটি বেরিয়ে যাবে ভেবে ছেড়ে দিয়েছিলেন ভারতীয় ব্যাটার, কিন্তু সাকিবের সুইংয়ে ভেঙে যায় স্টাম্প। ১৭ রানে ২ উইকেট হারিয়ে বসে ভারত।
সেখান থেকে জুটি গড়েন লোকেশ রাহুল আর শুভমান গিল। গিল বেশ স্বচ্ছন্দ্যে ব্যাট করলেও রাহুলকে হাত খুলে খেলতে দেননি বাংলাদেশি বোলাররা। অবশেষে ধীরগতির রাহুলকে ফেরান শেখ মেহেদি। ৩৯ বলে ১৯ রান করে মিডউইকেটে শামীম হোসেন পাটোয়ারীর হাতে ধরা পড়েন রাহুল।
ইশান কিশানও বেশিদূর এগোতে পারেননি। ৫ রান করা এই ব্যাটারকে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলেন মেহেদি হাসান মিরাজ। এরপর থিতু হওয়ার চেষ্টা করা সূর্যকুমারকে (৩৪ বলে ২৬) বোল্ড করেন সাকিব। মোস্তাফিজ বোল্ড করেন জাদেজাকে (৭)।
কিন্তু শুভমান গিল একপ্রান্ত ধরে সেঞ্চুরি তুলে নেন। দলীয় ২০৯ রানের মাথায় ভারতের সপ্তম ব্যাটার হিসেবে তাকে আউট করেন শেখ মেহেদি। ১৩৩ বলে ১২১ রানের চোখ ধাঁধানো ইনিংসে ৮টি চারের সঙ্গে ৫টি ছক্কা হাঁকান ভারতীয় ওপেনার।
মোস্তাফিজ ৫০ রানে নেন ৩টি উইকেট। তানজিম সাকিব ৩২ রানে ২টি আর শেখ মেহেদি ৫০ রানে নেন ২টি উইকেট।
এর আগে ৫৯ রানে বাংলাদেশের ছিল না ৪ উইকেট। আরও একবার ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে অল্পতেই গুটিয়ে যাবে টাইগাররা, শঙ্কা ছিল তেমন। কিন্তু সাকিব আল হাসান আর তাওহিদ হৃদয় দলকে বাঁচালেন বড় বিপদ থেকে।
তাদের শতরানের জুটি আর শেষদিকে লোয়ার অর্ডার ব্যাটারদের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে ৮ উইকেটে ২৬৫ রানের চ্যালেঞ্জিং পুঁজি পায় বাংলাদেশ।
কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে সুপারফোরপর্বের নিয়মরক্ষার এই ম্যাচে টসভাগ্য সহায় হয়নি বাংলাদেশের। টস জিতে সাকিবদের ব্যাটিংয়ে পাঠান ভারতীয় অধিনায়ক রোহিত শর্মা। যাচ্ছেতাই ব্যাটিংয়ে শুরু হয় টাইগারদের। ২৮ রান তুলতে তারা হারিয়ে বসে ৩ উইকেট।
আরও একবার ব্যাট হাতে ব্যর্থ লিটন দাস। এবার রানের খাতাই খুলতে পারেননি। ২ বলে ০ করে মোহাম্মদ শামির দারুণ এক ডেলিভারিতে বোল্ড হন লিটন।
পরের ওভারে শার্দুল ঠাকুরের বলে বোল্ড হন দারুণ শুরু করা তানজিদ হাসান তামিমও। তার ব্যাটে বল লেগে ভেঙে গেছে স্টাম্প। ১২ বলে ৩ বাউন্ডারিতে ১৩ রান করেন তরুণ এই ওপেনার।
এনামুল হক বিজয় দীর্ঘদিন পর সুযোগ পেয়েছিলেন। কিন্তু এমনই দৃষ্টিকটু শট খেলে ফিরলেন, আবারও তার জন্য দলে জায়গা পাওয়া কঠিনই হবে।
ভারতীয় পেসার শার্দুল ঠাকুরকে চার্জ করতে গিয়ে বল সোজা আকাশে তুলে দেন বিজয়, ক্যাচটি সহজেই গ্লাভসবন্দী করেন উইকেটরক্ষক। ১১ বলে ৪ রানে থামে বিজয়ের প্রত্যাবর্তন ইনিংস।
একের পর এক উইকেট পড়ছে। ধস থামাতে প্রমোশন দিয়ে পাঁচ নম্বরে পাঠানো হয় মেহেদী হাসান মিরাজকে। মিরাজ দুইবার জীবন পান। তারপরও ইনিংস বড় করতে পারেননি। ২৮ বলে ১৩ করে অক্ষর প্যাটেলের বলে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন এই অলরাউন্ডার। ৫৯ রানে ৪ উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
সেখান থেকে সাকিব আল হাসান আর তাওহিদ হৃদয়ের দুর্দান্ত প্রতিরোধ। দুজন মিলে গড়লেন শতরানের জুটি।
চার বছর পর সাকিবকে হাতছানি দিচ্ছিল সেঞ্চুরি। তার ইনিংসটা বলতে গেলে ছিল একদম নিখুঁত। কিন্তু ৩৩ ওভারের পর পানিপানের বিরতি যেন অভিশাপ হয়ে এলো। বিরতির পর মনোসংযোগে চিড় ধরলো, প্রথম বলেই আউট হয়ে গেলেন সাকিব।
শার্দুল ঠাকুরের ক্রসসিম ডেলিভারি ব্যাটে লেগে ভেঙে দিলো স্টাম্প। সাকিবের লড়াকু ইনিংসের সমাপ্তি হলো একরাশ হতাশা নিয়ে। ৮৫ বলে ৮০ রানের ইনিংসে ৬টি চার আর ৩টি ছক্কা হাঁকান বাংলাদেশ অধিনায়ক। তাওহিদ হৃদয়ের সঙ্গে তার জুটিটি ছিল ১১৫ বলে ১০১ রানের।
হৃদয় আগের ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে চাপের মুখে খেলেছিলেন ৮২ রানের ইনিংস। আরও একবার দলের বিপদে জ্বলে উঠলো তার ব্যাট। তুলে নিলেন নিজের ক্যারিয়ারের পঞ্চম আর টানা দ্বিতীয় হাফসেঞ্চুরি।
তবে ফিফটির পর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি তরুণ এই ব্যাটার। মোহাম্মদ শামিকে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে ডিপ স্কয়ার লিগে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন হৃদয়। ৮১ বলে ৫৪ রানের ইনিংসে তিনি ৫টি চারের সঙ্গে মারেন ২টি ছক্কা।
শেষদিকে নাসুম আহমেদের ৪৫ বলে ৬ চার আর এক ছক্কায় ৪৪ আর শেখ মেহেদির ২৩ বলে ৩ বাউন্ডারিতে ২৯ রানে ভর করে চ্যালেঞ্জিং পুঁজি পায় বাংলাদেশ। অভিষিক্ত তানজিম সাকিবও ৮ বলে একটি করে চার-ছক্কায় করেন হার না মানা ১৪।
ভারতের শার্দুল ঠাকুর ৬৫ রানে নেন ৩টি উইকেট। ৩২ রানে ২ উইকেট নেন মোহাম্মদ শামি।