আব্দুর রহিম আকাশকে (১৬) পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। অথচ সেই হত্যাকান্ডকে ট্রেনে কাটা পড়ে মৃত্যুর নাটক সাজাতে মরিয়া হত্যাকারীরা। ছেলের হত্যার বিচার চাইতে প্রায় ছয়মাস ধরে ঘুরছে হতভাগ্য মা-বাবা। হত্যার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে নাম উল্লেখ করে মামলা করতে গেলেও সেই মামলা নেননি সৈয়দপুর রেলওয়ে থানা পুলিশ।
এমন অভিযোগ করেন, নীলফামারীর সদরের সংগলসী ইউনিয়নের কাজিরহাট বানিয়াপাড়ার গ্রামের বাসিন্দা সেকেন্দার আলীর ও মা রেখা বেগম। নিহত আব্দুর রহিম আকাশ (১৬) স্থানীয় সোনারায় সংগলশী উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র ছিলেন।
ভুক্তভোগী বাবা সেকেন্দার আলী বলেন, আব্দুর রহিম আকাশ আমার দ্বিতীয় স্ত্রীর ছেলে। চলতি বছরের বুধবার (২৯ মার্চ) রাত ৮ টার দিকে আমার সামনেই মটরসাইকেলের মাঝখানে বসিয়ে আমার প্রথম স্ত্রীর ছেলে ওমর ফারুক ও একই এলাকার মোকছেদ আলী চেন্টুর ছেলে সাজু মেলা দেখার কথা বলে নিয়ে যায়।
কিন্তু কয়েক ঘন্টা পর ওমর ফারুক একাই ফিরে আসায় তাকে ছেলের কথা জিজ্ঞেস করলে সে বলে আকাশ কোথায় তা আমি জানিনা। এরপর থেকে আর কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। এর দুইদিন পর আমরা জানতে পারি সংগলশী ইউনিয়নের বান্নিরডাঙ্গা এলাকায় ট্রেনে কাটা পড়া এক যুবক মারা যায়। পরে ওই এলাকায় গিয়ে লোকজনের কাছ থেকে নিহতের বিবরণ ও ছবি দেখে অনেকটা নিশ্চিত হই সে অন্য কেউ নয় আমার ছেলে আকাশ।
এরপর সৈয়দপুর রেলওয়ে থানায় গিয়ে জানতে পারি রেলওয়ে পুলিশ তাকে স্থানীয় হাতিখানা কবরস্থানে বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করেছে। পরে আমার বড় ছেলে ইউপি সদস্য নূর ইসলাম ও ওমর ফারুক আমাদের না জানিয়ে সৈয়দপুর পৌর কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে কবরস্থান থেকে মরদেহ উত্তোলন করে নিয়ে এসে আমাদেরকে না দেখিয়ে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করে। তিনি আরো বলেন, আমার ছেলে ওমর ফারুকের কথাবর্তা ও আচরণে মনে হয় সে আমার ছেলে আকাশকে হত্যা করে রেললাইনের ওপর রেখে আসে।
অভিযোগ করে মা রেখা বেগম বলেন, আমার সতীনের নেশাগ্রস্থ ছেলে ওমর ফারুক আমাদের ওপর নানা রকম অত্যাচার করত। আমার দুই ছেলের মধ্যে আকাশ ছিল অত্যন্ত মেধাবী। সে বলত আমি পড়ালেখা শেষ করে চাকুরী করে তোমার সব কস্ট দূর করব। কিন্তু ওমর আমার দুই ছেলেকে মেরে ফেলার হুমকি দিত।
ঘটনার দিনও আকাশকে মাদকাসক্ত ফারুক মটরসাইকেলে নিয়ে যায়। কিন্তু এখন সে বলছে আকাশ আত্মহত্যা করেছে। সে যদি আত্মহত্যা করবে তাহলে লাশ যেখানে পাওয়া যায় সেখান থেকে অনেক দূরে কলা বাগান থেকে তার জুতা পাওয়া গেল কিভাবে। তাই আমার সন্দেহ ওমরই আকাশকে হত্যা করেছে।
আমরা সন্দেহভাজন হিসেবে ওমর ফারুকের নামে হত্যা মামলা করতে গেলে সৈয়দপুর রেলওয়ে থানা তা গ্রহণ করেননি। পরে বাধ্য হয়ে আদালতের মাধ্যমে মামলা করি। তবে এ মামলা করায় ওমর ফারুক ও নুর ইসলাম আমার স্বামীসহ আমার আরেক ছেলেকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছে। তাদের ভয়ে আমরা এখন ঘর-বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছি। প্রশাসনের কাছে বিষয়গুলো তদন্ত সাপেক্ষে ছেলের হত্যার বিচার দাবি করেন তারা।
জানতে চাইলে হত্যাকান্ডের বিষয়টি অস্বীকার করেন রেখা বেগমের বড় সতীনের ছেলে ইউপি সদস্য নুর ইসলাম জানান, পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করছেন। লাশের ময়নাতদন্ত হয়েছে। আকাশ বাবা মায়ের সাথে ঝগড়া করে আত্মহত্যা করতে পারে। আমাদেরকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে আমার সৎমা।
এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সৈয়দপুর রেলওয়ে থানার উপ-সহকারী পরিদর্শক মনিরুজ্জামান বলেন, স্বজনের খোঁজ না পাওয়ায় ৪৮ ঘন্টা পর মরদেহ দাফন করা হয়। পরবর্তীতে খোঁজ পাওয়ায় স্থানীয় পৌর কর্তৃপক্ষের অনুমতিতে কবর থেকে মরদেহ উত্তোলন করে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ব্যাপারে একটি হত্যা মামলা হয়েছে। যার তদন্ত চলমান।
সৈয়দপুর রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাকিউল আজম বলেন, পুলিশ সুপারসহ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ময়নাতদন্ত রিপোর্ট হাতে এসেছে। এরই মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে বলে জানান তিনি।