দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে গত কয়েকদিনের টানা হালকা গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিপাতের জন্য ক্ষেতে পানি জমায় পচনের হুমকিতে মরিচ, করলা, পটল, শসা, বেগুনসহ অন্যান্য সবজি ক্ষেত। এতে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন সবজি চাষিরা।
সবজি চাষিদের ভাষ্য, মরিচ, করলা, পটল, শসাসহ বেশ কয়েকটি সবজি ক্ষেতে সামান্য কিছুদিন পানি জমে থাকলে সবজি গাছগুলো লালচে হয়ে পচে যায়। তবে উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর বলছে, এ মুহুর্তে বৃষ্টির কারণে সবজি ক্ষেতের কিছুটা ক্ষতি হলেও দ্রুততম সময়ের মধ্যে পানি কমে গেলে সবজি ক্ষেতের তেমন ক্ষতি হবে না।
সরেজমিনে উপজেলার কৃষ্ণপুর, চাঁদপাড়া, গঙ্গা প্রসাদ, মুক্তারপুরসহ বেশ কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, চাষিরা শুরুতে কাঁচা মরিচের দাম ভালো পেলেও অনেকে দেরিতে চাষাবাদ করায় অতিরিক্ত খরা এবং পরে টানা বৃষ্টিপাতে উপজেলার নিচু এলাকার বেশিরভাগ সবজি ক্ষেত পানিতে রয়েছে। এতে মরিচ, করলা, পটল ও শসার গাছ লালচে রং হয়ে পচন ধরেছে। এতে সবজি চাষিরা ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি খরিপ মৌসুমে উপজেলায় ৭০০ হেক্টর জমিতে সবজি চাষাবাদ করা হয়েছে।
পৌর এলাকার চাঁদপাড়ার বর্গাচাষি আনোয়ার হোসেন বলেন, ৫০ শতক জমি বর্গা নিয়ে মুলা, ১৫ শতক জমিতে করলা এবং ১৫ শতক জমিতে শসা চাষ করছেন। মুলা চাষে প্রথম পর্যায়ে ১৩ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। বৃষ্টির জন্য গাছ নষ্ট হওয়ার উপক্রম হওয়ায় আরো ৭ হাজার টাকা খরচ করতে হয়েছে। তবে সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে এবং প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ না হলে অন্তত লক্ষাধিক টাকার মুলা বিক্রি হবে। টানা হালকা বৃষ্টিপাতের জন্য জমিতে পানি জমে থাকায় করলা ও শসার ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
দক্ষিণ কৃষ্ণপুর গ্রামের বর্গা চাষি উজ্জ্বল মন্ডল বলেন, বর্গা নেওয়া এক বিঘা জমিতে বেগুন চাষাবাদ করা হয়েছে। এতে খরচ হয়েছে এখন পর্যন্ত ৪০ হাজার টাকা। এ পর্যন্ত বেগুন বিক্রি হয়েছে পাঁচ হাজার টাকার। বর্তমানে বেগুন ক্ষেতে পোকা ধরেছে। ৬ বিঘা জমিতে কলা লাগিয়েছেন। এতে খরচ হয়েচে ৬০ হাজার টাকা। কোনো প্রকার দুর্যোগ না হলে অন্তত ৬ লাখ টাকার কলা বিক্রি হবে। কিন্তু বৃষ্টিপাতের জন্য পানি জমে থাকায় কলাগাছেও পচন রোগ দেখা দিয়েছে। তবে ৫ শতক জমিতে মরিচ চাষাবাদ করেছেন।
একই এলাকার যোগেন চন্দ্র রায় বলেন, ১০ শতক জমিতে মরিচ আবাদ করেছেন। কিন্তু বৃষ্টিপাতের জন্য গাছগুলো নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়ে দাঁড়িয়েছে। একই এলাকার কৃষক মাঝন চন্দ্র রায় বলেন, ১০ শতক জমিতে বেগুন আবাদ করেছেন। বৃষ্টিপাতের জন্য বেগুন ক্ষেতে পোকার আক্রমণ ধরেছে। এখন পর্যন্ত ৫ কেজি ভালো বেগুনও পাওয়া যায়নি। এ বছর বেগুন চাষে লোকসান গুণতে হচ্ছে।
উপজেলার মুক্তারপুর গ্রামের কৃষক কামরুজ্জামান বলেন, ১৫ শতক জমিতে পটল, ৮ শতক জমিতে করলা ও ৫ শতক জমিতে মরিচ চাষাবাদ করা হয়েছে। ক্ষেতে বৃষ্টির পানি জমার জন্য পুরো মরিচ ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। অন্য দুইটি ফসলও নষ্টের মুখে পড়েছে। এলাকার বেগুন চাষি রবিউল ইসলমা বলেন, তার বেগুন ক্ষেতে পোকার আক্রমণ ধরেছে। পোকার আক্রমণে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। পোকা দমনে কি করবেন তা ভেবে পাচ্ছেন না।
উপজেলার গঙ্গাপ্রসাদ গ্রামের কৃষক বেলাল হোসেন বলেন, এক বিঘা জমিতে শসা ও করলা চাষ করেছেন। বৃষ্টিতে ক্ষেতের গাছ হলদে রং হয়ে মারা যাচ্ছে। লাভের বদলে এবার লোকসান গুণতে হচ্ছে। একই এলাকার কৃষক লিটন বলেন, ২০ জমিতে করলা চাষ করেছেন। কিন্তু বৃষ্টিতে ক্ষেতের গাছ হলদে রং ধরে পচে যাচ্ছে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা শাহানুর রহমান বলেন, বর্তমানে বৃষ্টিপাতের জন্য খরিপ মৌসুমের সবজির ক্ষেতের সমস্য কিছুটা হচ্ছে। গাছের গোড়ায় পানি যেন জমে না থাকে সে বিষয়ে কৃষকদের লক্ষ্য রাখতে হবে। তবে বৃষ্টি কমে গেলে তেমন ক্ষতি হবে। বেগুন ক্ষেতে পোকার ঠোকাতে জমিতে ফেরোমেন ফাঁদ, হলুদ কাঠালো ফাঁদসহ জৈব্য বালাই নাশকের প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। একই সঙ্গে পাচিং পদ্ধতিও ব্যবহার করা যেতে পারে।