ধর্মশালায় আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়েই শুরু হবে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ মিশন। আফগানিস্তানের বিপক্ষে শুরুতে ছন্দে থাকতে পারলে তা পুরো টুর্নামেন্টে টেনে নেওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হবে। ফলে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে শুরুটা সব সময়ই গুরুত্বপূর্ণ। বুধবার আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ শুরুর আগে অধিনায়ক তামিম ইকবাল জানিয়েছেন, বিশ্বকাপের আগে আফগানিস্তানের বিপক্ষে চারটি ম্যাচ (এই সিরিজের তিনটি ম্যাচ ও এশিয়া কাপের একটি ম্যাচ) তাদের বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচের প্রস্তুতিতে ভূমিকা রাখবে।

সব মিলে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজ জয়ের সম্ভাবনা নিয়েই চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে প্রথম ম্যাচে মাঠে নামছে দুই দল। ম্যাচটি শুরু হবে বুধবার দুপুর ২টায়। সরাসরি দেখাবে গাজী টেলিভিশন ও টি-স্পোর্টসে।

ওয়ানডে বিশ্বকাপের সূচি প্রকাশ করার পর আইসিসি পাঁচটি ম্যাচকে টুর্নামেন্টের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে ঘোষণা করেছিল। সেই তালিকায় রয়েছে ধর্মশালায় বাংলাদেশ-আফগানিস্তান ম্যাচটিও। সাম্প্রতিক সময়ে এই দুই দলের ম্যাচ বিশ্বক্রিকেটে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঝাঁজ তুলেছে। বাংলাদেশ অবশ্য বিশ্বকাপের আগে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের লড়াই দিয়ে নিজেদের অবস্থান বুঝে নিতে চায়। ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়ক তামিম ইকবাল বলেছেন, ‘বিশ্বকাপের আগে ওদের সঙ্গে ৪টি ম্যাচ খেলবো। দুই দলের জন্যই এটা সমান সুবিধা পরস্পরের শক্তিমত্তা ও দুর্বলতা জানার জন্য। আমাদের জন্য যেমন ওদের জানার সুযোগ, একইভাবে ওদেরও। তবে বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচের প্রতিপক্ষের সঙ্গে আগে ৪টা ম্যাচ খেলবো, অবশ্যই এটা ভালো।’

একমাত্র টেস্টে আফগানিস্তানকে উড়িয়ে দিলেও ওয়ানডে সিরিজ জয় এতটা সহজ হবে না। ঈদের ছুটি শেষেই চট্টগ্রামে দুই দিন রুদ্ধদ্বার অনুশীলন করেছেন তামিমরা। যে অনুশীলন দেখার অনুমিত ছিল না কারও। বোঝাই যাচ্ছে নিজেদের প্রস্তুতির তথ্য ফাঁস হতে দিতে চায়নি বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্ট। বিশ্বকাপের আগে এশিয়া কাপ ছাড়া আর শুধু নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ আছে। সেটি হবে বিশ্বকাপের ঠিক আগেই। এই দুই সিরিজে বিশ্বকাপের দলটিরই খেলার সম্ভাবনা বেশি। পরীক্ষা-নিরীক্ষা কিছু করতে চাইলে তাই শেষ সুযোগ এই সিরিজ। তবে বাংলাদেশ কোচ এটাকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা হিসাবে দেখাতে চান না। তিনি অন্য খেলোয়াড়দের ইনজুরি কিংবা অন্যভাবে ছিটকে যাওয়ার শঙ্কা থেকে শক্তির গভীরতা বাড়াতে চান। ভালো বিকল্প ক্রিকেটার রাখতেই নাঈম শেখ-আফিফ হোসেনদের ঝালিয়ে দেখবেন এক বা দুটি ম্যাচে।

পেস বোলারদের অনুশীলনের মুহূর্ত।
পেস বোলারদের অনুশীলনের মুহূর্ত।
চলতি সিরিজে ব্যাটিং বিভাগে নাঈম শেখ ও আফিফ হোসেন সুযোগ পেয়েছেন। পেস বোলারদের তালিকাও বেশ লম্বা। তাসকিন আহমেদ, মোস্তাফিজুর রহমান, এবাদত হোসেন, শরিফুল ইসলাম, হাসান মাহমুদরা আছেন পেস আক্রমণে। রসদ পূর্ণ থাকায় সিরিজ জয়ের পাশাপাশি দলের সবাইকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে খেলানোর পরিকল্পনা তামিম ইকবালদের। তার পরেও ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে ওয়ানডে অধিনায়ক বলে গেছেন, ‘জিততে তো অবশ্যই চাইবো, এটাই সবার আগে। এই একটা সিরিজে আমরা চেষ্টা করবো সবাইকে একবার হলেও সুযোগ দিতে। তবে নিশ্চয়তা দেওয়া যাচ্ছে না। অবশ্যই চেষ্টা করবো বিশ্বকাপের আগে তাকে (নাঈম) কিছু গেম টাইম দেওয়ার। সে নেটে অনেক ভালো খেলছে, দেখে অনেক ভালো মনে হচ্ছে। যদি ওরকম সুযোগ আসে, অবশ্যই এটা নিয়ে আমরা ভাববো। কখনও চাই না কেউ সরাসরি বড় ইভেন্টে গিয়ে ম্যাচ খেলুক। তার আগে যদি ২-৩ টা ম্যাচে সুযোগ দিতে পারি, তাদের জন্য ভালো হয়।’

এদিকে, পর্যাপ্ত সময় পেলেও অধিনায়ক তামিম এখনও পুরোপুরি ফিট হতে পারেননি। তবে শতভাগ ফিট না হলেও আজ প্রথম ওয়ানডে খেলবেন বলেই জানিয়েছেন তিনি। এছাড়া ইনজুরি কাটিয়ে ওয়ানডে দলে ফিরছেন সাকিব আল হাসানও। সবমিলিয়ে প্রথম ওয়ানডেতে কোনও ঝুঁকি নিবে না বাংলাদেশ। পুরো শক্তির দল নিয়েই স্বাগতিকরা ২২ গজে নামবে।

অপর দিকে, আফগানিস্তানের বড় তারকা রশিদ খান টেস্ট ম্যাচে ছিলেন না। তার ফেরাতে দলের শক্তি অনেকখানিই বেড়েছে। রশিদের সঙ্গে রঙিন পোশাকের পরিচিত পারফর্মাররাও দলে ঢুকেছেন। বাংলাদেশকে কখনও সহজে জিততে দেয়নি তারা। এবারও সেটা দিতে চায় না। দলটির অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ শহীদী বলেছেন, ‘টেস্ট ম্যাচ আমাদের অনেক শিক্ষা দিয়েছে। এখন ভালোভাবে প্রস্তুত। আবু ধাবিতে ১৫ দিনের ক্যাম্প করেছি। টেস্টে যা করতে পারিনি, এবার আমরা সবকিছুর জন্যই প্রস্তুত।’

ওয়ানডে সিরিজে আফগানিস্তানকে ৩-০ ব্যবধানে হারাতে পারলে বাংলাদেশের সামনে সুযোগ হবে র‌্যাঙ্কিংয়ের ৫ নম্বরে ওঠার। এই মুহূর্তে বাংলাদেশের অবস্থান ৭ নম্বরে। দুই দলের সবশেষ ৫ ওয়ানডে লড়াইয়ে বাংলাদেশ জিতেছে চারটিতেই। স্বাভাবিক ভাবেই কিছুটা আত্মবিশ্বাস নিয়েই বাংলাদেশ মাঠে নামবে। তবে বিশ্বকাপের আগে গুরুত্বপূর্ণ এই সিরিজটি বৃষ্টির বাধার মুখেও পড়তে পারে। আজ চট্টগ্রামে ম্যাচ শুরুর সময়টাতে ৩০ শতাংশ বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। সব ছাপিয়ে জমজমাট ম্যাচেরই প্রত্যাশা।

দুই দল এখন পর্যন্ত ১১ বার মুখোমুখি হয়েছে। জয়ের পাল্লা ভারি বাংলাদেশের। ৭ জয়ে এগিয়ে থাকা লাল-সবুজ দল বিশ্বকাপের আগে পাল্লা ভারি করবে নাকি আফগানিস্তান এগিয়ে যাবে- সেটা সময়ই বলে দেবে। তবে বুধবার থেকে শুরু হতে যাওয়া তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ যেন দুই দলের কাছে বিশ্বকাপের ড্রেস রিহার্সেল!