দরজায় কড়া নাড়ছে মুসলিমদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসবের অন্যতম ঈদুল আযহা। আর কয়েকদিন পরেই কোরবানির ঈদ। এই ঈদকে সামনে রেখে দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার কামারশালা গুলোতে হাপরের হাস-ফাস শব্দে পুড়ছে কয়লা-জ্বলছে লোহা। ফলে উপজেলার হাট-বাজারের কামারশালাগুলো এখন লোহা আর হাতুড়ির টুং টাং শব্দে মুখরিত হয়ে উঠেছে। কামারশিল্পের কারিগরদের হাতুড়ির আঘাতে তৈরি হচ্ছে দা, বঁটি, চাকু, ছুরি, চাপাতি, কুড়ালসহ ধারালো সব যন্ত্রপাতি। পবিত্র ঈদুল আযহার কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে উপজেলার হাট-বাজারেই ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করছেন কামারপল্লীর কারিগররা।
সরজমিনে দেখা গেছে, কামারদের সারাবছর কাজ সীমিত থাকলেও কোরবানির ঈদের এ সময়ে বৃদ্ধি পায় তাদের কর্ম ব্যস্ততা। এই ঈদকে ঘিরে আশার আলো দেখছেন কামারশিল্প। কামাররা নাওয়া-খাওয়া ভুলে অবিরাম কাজ করে যাচ্ছেন। দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই বৃদ্ধি পাচ্ছে কামারদের ব্যস্ততা।
কামারশিল্পীরা বলেন, প্রতিটি কাটারি বিক্রি হচ্ছে প্রকারভেদে ছোট চাকু প্রতিটি ৩৫-৪০ টাকা, বড় চাকু ৫০০-৭০০ টাকা, ছোড়া ৫০০-৭০০ টাকা, চাপাতি ৪০০-৪৫০ টাকা, কুড়াল প্রতিকেজি ৪০০ টাকা। এছাড়াও প্রতিটি বঁটি বটি ৩০০-৪০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। কামারপল্লীর কারিগররা বলেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর কয়লা, লোহা ও শ্রমিকদের মজুরি মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে ক্রেতারা বলছেন-ঈদ উপলক্ষে দা, ছুরি ও চাপাতির দাম বেশি নেয়া হচ্ছে। পশু জবাই করার বড় ছুরিগুলো ৫০০-৭০০ টাকা পর্যন্ত নেয়া হচ্ছে। চাপাতিগুলো প্রতিকেজি ৪০০-৪৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা হচ্ছে। তারা আরো বলেন, এবছর পশু কোরবানির উপকরণের দাম তুলনামূলক বেশি। তবে কামাররা জানান, কয়লা, লোহা ও শ্রমিকদের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় সরঞ্জামাদির দাম কিছুটা বাড়ানো হয়েছে।
উপজেলার গ্রামীণ শহর রানীরবন্দরের সুইহারিবাজারে নশরতপুর গ্রামের কামার রবিন রায় বলেন, ঈদ ঘনিয়ে আসায় কাজের চাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই তাদের রাত-দিন কাজ করতে হচ্ছে। নতুন সরঞ্জামের চাহিদার পাশাপাশি পুরাতনগুলোতে শান দেয়া হচ্ছে। তবে এ বছর বেশির ভাগ ক্রেতাই দা-ছুরিসহ পুরাতন সরঞ্জাম মেরামত করতে নিয়ে আসছেন। বিক্রি একটু কম হচ্ছে। ঈদের গরুর বাজার ভালোভাবে শুরু হলে বেচাকেনা আরো বৃদ্ধি পাবে।
উপজেলার সাঁইতাড়া ইউনিয়নের জগনাথপুর গ্রামের কামার কোথা বাবু বলেন, প্রায় ৩০ বছর ধরে এ পেশার সাথে জড়িত রয়েছি। আমার পূর্ব পুরুষরাও এই পেশায় যুক্ত ছিলেন। এখন সারাবছর তেমন কোন কাজ থাকে না। কোরবানির ঈদের আগে কাজের চাপ বেশি থাকে। তবে খুব বেশি বিক্রি হচ্ছে না। আশা করছি-ঈদের দুই-একদিন আগে বিক্রি বৃদ্ধি পাবে।
শিক্ষক আনোয়ার হোসেন নামে এক ক্রেতা বলেন, ঈদের আর কয়েকদিন বাকি রয়েছে। তাই আগে থেকেই পশু জবাইয়ের সরঞ্জামের নতুন ছুরি কিনে রাখছি।
আরেক ক্রেতা উপজেলার হরনন্দপুরর গ্রামের আফছার আলী খান বলেন, পশু জবাইয়ের সরঞ্জাম ক্রয়ের পাশাপাশি পুরাতনগুলোতে শান দিতে নিয়ে এসেছি। আগেই ক্রয় করে রাখা হচ্ছে। ঈদের দুই-একদিন আগে কিনলে দাম বেশি হবে বলে তিনি জানান।