দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার খামারিরা ঈদুল আজহা উপলক্ষে চাহিদার চেয়েও প্রায় দুই হাজার বেশি পশু প্রস্তুত করছেন। এর মধ্যে অধিকাংশই দেশি জাতের। আর কয়েকদিন পরেই পুরোদমে শুরু হবে কোরবানির পশু কেনাবেচা। তাই গরুর পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন তাঁরা। তবে বর্তমানে পশু খাদ্যের মূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানান খামারিরা।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চিরিরবন্দর উপজেলায় গরু হৃষ্টপুষ্টকরণ খামার রয়েছে এক হাজার ২০০টি। এর মধ্যে নিবন্ধিত খামার ৪০০টি এবং অনিবন্ধিত ৮০০টি। ছাগলের খামার ৩৫০টি এবং ভেড়ার খামার রয়েছে ১৫০টি। এসব খামার থেকে এ বছর সাড়ে ২৮ হাজারের বেশি কোরবানির পশু প্রস্তুত করা হচ্ছে। চলতি বছর এই উপজেলায় কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে ২৬ হাজার ৪৯০টি। বাড়তি পশু রয়েছে প্রায় ২ হাজার। যা উপজেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হবে।
স্থানীয় খামারিরা বলেছেন, এবার পর্যাপ্ত দেশি জাতের গরু পালন করছেন। গরুকে খাবার হিসেবে কাঁচা ঘাস, খৈল, ভুট্টা এবং ধানের গুড়াসহ প্রাকৃতিক খাবার খাওয়ানো হচ্ছে। তবে পশুখাদ্যের দাম বেশি হওয়ায় গরু পালনে খরচ অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। খামারিরা আরো বলেন, এবার যে পরিমাণ দেশি গরু প্রস্তুত রয়েছে, তাতে দেশি গরু দিয়েই কোরবানির চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে। খামারিরাও লাভবান হবেন। তাই ঈদের আগে দেশের বাজারে ভারতীয় গরু প্রবেশে কঠোর নজরদারির দাবি করেছেন তাঁরা।
উপজেলাে নশরতপুর গ্রামের বাকালী পাড়ায় আলম হোসেনের ফার্মে গিয়ে দেখা যায়, গরু পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন খামারের লোকজন। খামারের স্বত্বাধিকারী মো. আলম হোসেন বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে গরুর আসছি। আমার খামারে দেশি জাতের ১২৫টি গরু রয়েছে। এর মধ্যে কোরবানির জন্য ৭০টি গরু প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পশুগুলোকে নিয়মিত পরিচর্যা করা হচ্ছে। প্রতিদিন গোসল করানো হয়। জায়গা পরিষ্কার রাখা হয়। এছাড়া সার্বক্ষণিক পরিবেশ ঠিক রাখা হয়।
কী খাবার খাওয়াচ্ছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রতিদিন পশুগুলোকে প্রাকৃতিক খাদ্য যেমন কাঁচা ঘাস, গমের ভুসি, ভুট্টা, খৈল, চিটাগুড়, খড় খাওয়ানো হয়। নিয়মিত পশু ডাক্তার দিয়ে পরীক্ষা করা হয়। গো-খাদ্যের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় বর্তমানে গরু বিক্রি করে লাভ কিছুটা কম হবে। তবে আমি আশা করি এবার গরুর দাম ভালো পাবো। আলমের মতো অনেক খামারিই এবার পশুর ভালো দাম পাওয়ার প্রত্যাশা করছেন।
চিরিরবন্দর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আবুল সারফরাজ হোসেন জানান-স্বাস্থ্যসম্মতভাবে হৃষ্টপুষ্টকরণ, প্রাকৃতিক উপায়ে পশুপালন এবং বাজারজাতকরণে খামারিদের নানা পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, গরুকে দানাদার খাদ্য ও কাঁচা ঘাস খাওয়ানোর পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। পাশাপাশি ভিটামিনও খাওয়াতে বলছি খামারিদের। তবে গরুকে নিষিদ্ধ কোনো রাসায়নিক ও হরমোনের ওষুধ খাওয়ানো যাবে না। প্রাকৃতিক উপায়ে গরুকে ভালো খাদ্য কীভাবে খাওয়াবে এবং কীভাবে মানসম্মত মাংস উৎপাদন করবে, সে বিষয়ে খামারিদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। চলতি বছর এই উপজেলায় কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে ২৬ হাজার ৪৯০টি পশু। এ বছর ২৮ হাজার ৫৪০টি কোরবানির পশু প্রস্তুত করা হচ্ছে। উপজেলার চাহিদা মিটিয়ে বাড়তি প্রায় ২ হাজার পশু দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা যাবে।