জমি নিয়ে বিরোধের জেরে আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ৫৮ শতক জমির প্রায় এক হাজার’ ফলন্ত কলাগাছ কেটে ধ্বংস করেছে ইউপি মহিলা সদস্যসহ তার লোকজন। শুক্রবার (১৬ জুন) ভোর ৫ টার দিকে নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার বোতলাগাড়ী ইউনিয়নের শ্বাষকান্দর শরৎপাড়ায় এই নৃশংস ঘটনা ঘটেছে।

এতে প্রায় ৬ লাখ টাকার ফসলের ক্ষতি হয়েছে। এমন অপরাধ করেও ক্ষমতার দাপটে উল্টা ভুক্তভোগী পরিবারকে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে মেম্বার গং। ফলে বিচার পাওয়া নিয়ে সংশয়সহ জীবনের নিরাপত্তাহীনতার হুমকির মধ্যে পড়েছে ক্ষতিগ্রস্তরা। এতে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক মজিবর রহমান বলেন, প্রতিবেশী সামসুল আলম শাহের স্ত্রী এবং ইউনিয়নের ৪, ৫ ও ৬ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা মেম্বার শিউলি বেগমের কাছ থেকে বাড়ির পাশেই ৮৫ শতক জমি কিনে নিয়েছি। এই জমিতে কলা আবাদ করেছি। ইতোমধ্যে প্রায় ৫ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। কিছু কিছু গাছে কলা ফলেছে। মাস খানেকের মধ্যে ফলন তুললে প্রায় ৩ লাখ টাকা লাভ করতে পারতাম। 

শুক্রবার ভোরে সেই বাগানের প্রায় ৫৮ শতকের ৯ শ' থেকে এক হাজার ফলন্ত গাছ কেটে শেষ করে দিয়েছে মহিলা মেম্বার, তাঁর স্বামী ছেলেসহ ২০-২৫ জন। এর মধ্যে অজ্ঞাত অনেক বহিরাগত ভাড়াটিয়া লোকও ছিল। প্রায় ১ ঘন্টা ধরে তারা এই ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। খবর পেয়ে ঘুম থেকে উঠে গিয়ে প্রতিবাদ করলে তারা দেশীয় অস্ত্র দা, হাসুয়া, কোদাল ও লাঠিসোটা নিয়ে আমাদের উপর চড়াও হয়। 

পরে জীবন নিয়প আমরা সরে গেলে এলাকাবাসীর চোখের সামনে তারা গাছগুলো কেটে ফেলে। যাওয়ার সময় এ ঘটনায় থানা পুলিশ করলে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। সকালে ৯৯৯ নম্বরে খবর পেয়ে পুলিশ এসে তদন্ত করে চলে যাওয়ার পর বাড়ির সামনে এসে আবারও অস্ত্রের মহড়া দিয়ে অশ্লীল গালাগাল ও মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে গেছে। 

মজিবরের ছেলে সোলাইমান আলী বলেন, মহিলা মেম্বারের স্বামী একজন ডাকাত ছিল। সে তার পৈত্রিক সম্পত্তির যে জমি স্ত্রী কে লিখে দিয়েছে সেখান থেকে এই ৮৫ শতক জমি আমার বাবা কিনে নিয়েছেন। এখন তাদের ছেলে শাহজাহান আলী শাহ দাবী করছেন তার বাবা একাই জমি লিখে দিয়েছেন। কিন্তু জমির ওয়ারিশ তার ৪ ফুফুও। তাই এই জমির ৫৮ শতক তাদের।

যেহেতু ফুফুরা লিখে দেয়নি তাই তা বিক্রিও হয়নি। শুধু বাবার অংশটুকু বিক্রি হয়েছে। বাকিটুকু প্রকৃত ওয়ারিশদের। যা সে তার ৪ ফুফুর কাছ থেকে কিনে নিয়েছে। এই জমির মালিক এখন সে তাই ছেড়ে দিতে হবে। এভাবে একদিকে বাবা মা জমি বিক্রি করে প্রতারণা করেছে। অন্যদিকে ছেলে সেই জমি ওয়ারিশদের কাছ থেকে কিনে নেয়ার নামে জোর জবরদস্তি দখল করতে চাচ্ছে।

ফলে আমরা এর সঠিক বিচার পেতে আদালতে মামলা করেছি। যা চলমান এবং সমাধান না হওয়া পর্যন্ত প্রতিপক্ষকে জমিতে না যাওয়ার জন্য নিষেধাজ্ঞা প্রদান করেছে। তারা সেই নির্দেশ অমান্য করে বেআইনীভাবে জমিতে গিয়ে আমাদের কলাবাগান ধ্বংস করেছে। মেম্বার হওয়ায় ক্ষমতার দাপটে তারা এমন অন্যায় করেছে। আমরা এই অপকর্মের সঠিক বিচার ও ক্ষতিপূরণ দাবী করছি। 

এব্যাপারে জানতে চাইলে সামসুল আলম শাহ অকপটে স্বীকার করেন যে কলাগাছ তারা কেটেছে। তিনি বলেন যেটুকু জমির কলাগাছ কাটা হয়েছে সেটুকুর মালিক আমার ছেলে। যা মজিবর দখল করে রেখেছে। মালিকানাসূত্রে জমিটি দখলে নিতে গাছ কাটা হয়েছে। তাতে কার কি করার আছে দেখি। আদালতের নিষেধাজ্ঞা বিষয়ে বলেন, দুইপক্ষের জন্যই ১৪৪ ধারা আছে। অথচ ২ দিন আগে মজিবর কলাগাছের পরিচর্যা করে সেই নিষেধাজ্ঞা ভেঙেছে। তখন পুলিশকে খবর দিলেও আসেনি। তাই আমরাও নিষেধাজ্ঞা মানিনা।

তিনি আরও বলেন, আমি একাই আমার পৈত্রিক সম্পত্তি বিক্রি করেছি। আমার স্ত্রী কে লিখে দিয়েছি। অথচ আমার ৪ বোন প্রাপ্য। আমার বিক্রিত ও দানকৃত জমির উপর তাদেরও অংশ আছে। আমার দ্বারা তাদের অংশের জমি বিক্রি বৈধ হয়নি। তাই যারা আমার কাছ থেকে জমি কিনেছেন বা যাদের আমি লিখে দিয়েছি তারা শুধু আমার অংশটুকুই পাবেন। বাকিটুকু ওয়ারিশরা পাবেন। যা ইতোমধ্যে আমার ছেলে তার ৪ ফুফুর কাছ থেকে কিনে নিয়েছে। এখন তাকে ছেড়ে দিতে হবে। 

তাহলে যারা জমি কিনেছে তারাতো পুরো জমি পাচ্ছেনা। বিক্রেতা হিসেবে তাদেরকে সম্পূর্ণ জমি বুঝিয়ে দেয়াতো আপনার দায়িত্ব তাইনা? তা না হলে জমি ক্রেতার সাথে প্রতারণা করা হচ্ছেনা? এমন প্রশ্নের জবাবে সামসুল আলম বলেন, বাকি জমি আদালত দিবে। নয়তো আমার কাছ থেকে টাকা ফেরত নিবে। তবুও জমির দখল ছাড়তে হবে। না ছাড়লে আমার করার কিছুই নাই। কারণ ওই জমির মালিক আর আমি নই, আমার ছেলে। সে দখলমুক্ত করতে কলাগাছ কেটেছে। শক্তি কিছু করে দেখাক।