স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার বিভিন্ন পর্যায়ে সক্রিয় সাবেক, বর্তমান ও আগামীর সম্ভাব্য নারী জনপ্রতিনিধি তথা অন্যান্য নারীনেত্রীদের সমন্বয়ে গঠিত ‘অপরাজিতা নেটওয়ার্ক’ -এর আয়োজনে, আজ ১৭ জুন ২০২৩ সকাল ১০:৩০ টায়, নীলফামারী চৌরঙ্গী মোড়ে “গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও)-এর নির্দেশনা অনুসারে রাজনৈতিক দলের সব পর্যায়ে অনতিবিলম্বে ন্যূনতম ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে হবে”, এই দাবীকে সামনে রেখে একটি মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এই মানববন্ধনে নীলফামারী জেলার সদর, সৈয়দপুর ও কিশোরগঞ্জ উপজেলা থেকে আগত নারীনেত্রী, যাদের সবাই নিজেদের পরিচয় দেন ‘অপরাজিতা’ হিসাবে, উক্ত শ্লোগানসহ অন্যান্য প্রাসঙ্গিক দাবি সম্বলিত বিভিন্ন ব্যানার, ফেস্টুন এবং প্লাকার্ড নিয়ে উপস্থিত হন। নীলফামারী সদর উপজেলা অপরাজিতা নেটওয়ার্কের সভাপতি মাসুদা আক্তার মিনি সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন- মহিলা পরিষদের সভা নেত্রী দৌলত জাহান, অপরাজিতা নেটওয়ার্কের সদস্য- এড. আলপনা রায় রেখা, শিল্পী রাণী, বেগম লাইলী কাদের, মনিরা বেগম, জাহানারা পারভীন, রোমানা আক্তার প্রমুখ। উল্লেখ্য, অপরাজিতাদের উদ্যোগে একই দাবীতে দেশের আরো ১৫টি জেলায় আজ একই ধরনের মানববন্ধন আয়োজিত হচ্ছে একযোগে।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ-১৯৭২ অনুচ্ছেদ ৯০ (খ) তে বলা ছিল যে রাজনৈতিক দলগুলির কেন্দ্রীয় কমিটিসহ সকল কমিটিতে ৩৩% নারী প্রতিনিধিত্ব ২০২০ সালের মধ্যে নিশ্চিত করতে হবে।ইতোমধ্যে উল্লিখিত সময়সীমা অতিক্রান্ত হলেও প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোসহ অন্য কোনো রাজনৈতিক দলই এই শর্ত পূরণে সক্ষম হয়নি। এই প্রেক্ষাপটে ‘অপরাজিতা: নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন’ শীর্ষক একটি প্রকল্পের সহায়তায় গঠিত ‘অপরাজিতা নেটওয়ার্ক’-ভুক্ত নারীনেত্রীরা উক্ত লক্ষ্যমাত্রা পূরণের জন্য নতুন একটি সময়সীমা যেন বেঁধে দেওয়া হয়, এবং সে অনুযায়ী রাজনৈতিক দলগুলির সকল স্তরে অনতিবিলম্বে ন্যূনতম ৩৩% নারী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলে যেন যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করে, এ দাবী জানিয়ে আসছেন। এইদাবী নিয়ে ইতোমধ্যে স্থানীয় পর্যায় থেকে শুরু করে জাতীয় পর্যায়ে তারা কখনও রাজনৈতিক দলের নেতাদের সাথে আবার কখনও সংসদ সদস্যদের সাথে সংলাপ, মানববন্ধন, স্মারকলিপি প্রদান প্রভৃতি কর্মসূচীতে অংশ নিয়েছে। সেই ধারাবাহিকতায় আজকের এই মানববন্ধন। এই মানববন্ধনে অপরাজিতাদের দাবীগুলো ছিলো নিম্নরূপ,
ক্স নীলফামার জেলার প্রধান প্রধান বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মূল কমিটিতে নারীদের অবস্থান এখনও অনেক দুর্বল; আমরা অতি সত্বর গুরুত্বপূর্ণ পদে – বিশেষ করে সভাপতি, সাধারন সম্পাদক বা সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য হিসাবে -নারীদের দেখতে চাই।
বাংলাদেশে নারীরা প্রধানীমন্ত্রী ও স্পিকারের মত উচ্চাসনে আসীন হওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন ক্ষেত্রে এগিয়ে এসেছে। তথাপি রাজনীতির অঙ্গনে তাদেরকে প্রায়ই শুনতে হয় যে, তাদের রাজনৈতিক যোগ্যতা কম ফলে মূল কমিটিতে আসতে সময় লাগবে। এই গতানুগতিক অজুহাতের বিপরীতে আমরা চাই সকল স্তরে নারীদেরকে রাজনৈতিক দলগুলিতে ন্যূনতম ৩৩% হারে সম্পৃক্ত করার সক্রিয় উদ্যোগ, এবং আমাদের দাবী হচ্ছে জাতীয় ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে নারীদের ৩৩% মনোনয়ন দেওয়ার শর্তও যুক্ত করা।
নারী প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোকে আরো সাহসী হতে হবে। আমরা মূলত শুধু সংরক্ষিত আসনে আর নির্বাচন করতে চাই না, বরং সাধারন আসনেও অনেক বেশি হারে নির্বাচন করতে চাই। আমরা বিশ্বাস করি এক্ষেত্রে নারীরা নির্বাচনে ভালো ফলাফল করবে।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ (আরপিও) নতুন করে সংশোধনের জন্য একটি বিল ইতোমধ্যে সংসদের চলতি অধিবেশনে উত্থাপিত হয়েছে, এবং তা বর্তমানে আইন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বিবেচনাধীন রয়েছে। এক্ষেত্রে যেসব সংশোধনী বিবেচনাধীন রয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে দল নিবন্ধনে ৩৩% নারী প্রতিনিধিত্বের প্রতিশ্রুতি সময়সীমা ২০৩০ সাল পর্যন্ত বাড়ানো। আইন প্রণেতাদের কাছে আমাদের দাবী, এই নতুন সময়সীমার মধ্যে যেন সকল দল উক্ত লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করে, এ ব্যাপারে আরো সুনির্দিষ্ট আইনি বাধ্যবাধ্যকতা প্রণয়ন করা হোক।
রাজনৈতিক দলের কমিটিগুলোর মেয়াদ শেষ হওয়ার সাথে সাথে সম্মেলনের আয়োজন করা। আগামী জেলা, উপজেলা এবং ইউনিয়ন সম্মেলনে রাজনৈতিক দলের কমিটিতে নারীর অর্ন্তভূক্তির মাত্রা বৃদ্ধি করতে হবে। আমরা বিশ^াস করি আগামী সময়সীমার আগেই সকল রাজনৈতিক দলের সকল কমিটিতে এক-তৃতীয়াংশ (৩৩%) নারীদেরকে অর্ন্তভূক্তির ফলে প্রকৃতভাবে নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন হবে।
উল্লেখ্য, সুইজারল্যান্ডের সহায়তায় বাস্তবায়িত ‘অপরাজিতা: নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন’ প্রকল্প ২০১১ সাল থেকে দেশে নারীর ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে কাজ করছে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৮ সাল থেকে হেলভেটাস সুইস ইন্টারকোঅপারেশন চারটি সহযোগী সংস্থা যথা রূপান্তর, প্রিপ ট্রাস্ট, খান ফাউন্ডেশন ও ডেমক্রেসিওয়াচ -এর মাধ্যমে বাংলাদেশের সিলেট, চট্টগ্রাম, বরিশাল, খুলনা, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ১৬টি জেলাধীন ৬২টি উপজেলার ৫৪০টি ইউনিয়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পটি স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত নারী প্রতিনিধি তথা নির্বাচনে আগ্রহী নারী নেত্রীদের দক্ষতা উন্নয়ন, বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণ এবং স্থানীয় ও জাতীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সাথে সংলাপ সহ নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন্ন সম্পূরক কর্মকান্ড পরিচালনা করছে। এসব কর্মকান্ডের অংশ হিসাবে উপরে উল্লিখিত দাবীতে অপরাজিতা নেটওয়ার্ক এর উদ্যোগে আজ ১৭ জুন ২০২৩ তারিখ সারা দেশের ১৬ টি জেলায় একযোগে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আমরা দলমত নির্বিশেষে সকলকে আহবান জানাই আমাদের এই দাবীর পক্ষে আওয়াজ তুলতে, এবং এভাবে রাজনীতিতে নারীদের অধিকতর হারে অংশগ্রহণের পরিবেশ তৈরির মাধ্যমে আগামীর সমৃদ্ধতর ও অধিকতর সমতাভিত্তিক দেশ ও সমাজ গঠনে সহায়তা করতে।