নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার ঝুনাগাছ চাপানী ইউনিয়ন পরিষদের হাট-বাজারের জমি অবৈধ ভাবে মালিকানা দাবী করে দখলের অভিযোগ উঠেছে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েরে প্রধান শিক্ষকসহ কয়েকজন প্রভাবশালীর বিরুদ্ধে। ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন এই জমিতে রয়েছে সরকারি স্থাপনা, মন্দির ও সুপারি হাট। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জমি উদ্ধার করে অবৈধ ভাবে দখলকারীদের বিরুদ্ধে আইননানুগ ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, ওই জমিতে ১৯৪৭ সালে নির্মিত সরকারি পাকা ও পরিত্যাক্ত শষ্য গুদাম ঘর রয়েছে যা পরবর্তীতে ইউনিয়ন পরিষদের অফিস হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়াও পাকা একতালা বিশিষ্ট সরকারি গণ শৌচাগার, প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের নির্মান করা পশু প্রজনন শেড ও পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক নির্মিত চাষী ক্লাবের একটি আধাপাকা ঘরসহ প্রায় ৩০ জন ব্যবসায়ী ছাউনি করে সুপারি ব্যবসা করে আসছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত ২৯ মে বিকেল ৪ টায় ডিমলা উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার আনিছুর রহমানসহ উত্তর ঝুনাগাছ চাপানী এলাকার মৃত করিম বকসের ছেলে মিলনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক রুহুল আমিন, মৃত প্যালকা মামুদের ছেলে তোফাজ্জল হোসেন, নমেজ উদ্দিনের ছেলে আব্দার রাজ্জাক দুলাল, ননী ভূষণ রায়ের ছেলে দেব দুলাল রায় ও মৃত আব্দুল জব্বারের ছেলে খলিল ইসলাম লোকজন নিয়ে এসে জমি পরিমাপ করে খুটি স্থাপন করেন। এসময় সেখানে থাকা দোকানদারদের দোকান সরিয়ে নিতে নির্দেশ দেয় দখলদাররা। ব্যবসায়ীরা উঠে যেতে অস্বীকৃতি জানালে তাদের নানা ভাবে হুমকি দেওয়া হয়।
পান ব্যবসায়ী রমানাথ মোহন্ত বলেন, আমার বাবা এই জায়গায় ব্যবসা করতো। এখন আমি ব্যবসা করছি। আমরা নিয়মিত হাটের ইজরাদারকে ইজারার টাকা দিয়ে আসছি। গত সোমবার হটাৎ রুহুল আমিন ও দুলালগং এই জমিতে খুটি স্থাপন করে। আমাদের দোকানের উপর দিয়ে নতুন করে চালা দিয়েছে। এখন আমরা কোথায় যাবো? ব্যবসা না করলে খাব কি?
অপর পান ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম জানায়, আমি এই জায়গায় দীর্ঘদিন থেকে ব্যবসা করে আসছি। এখন এই জমিতে তারা মালিকানা দাবী করছে। আমরা হাট ইজারাদার ও ইউপি চেয়াম্যানকে জানিয়েছি। সরকারি লোক এসে পরিমাপ করে দিয়ে গেছে এখন কেউ কিছু বলতেও পারছে না, আমরাও নিরুপায়।
চাপানী হাট-বাজারের ইজারাদার শহিদুল ইসলাম বলেন, এমনিতেই আমাদের হাটের জায়গা সংকট, অনেকেই দখল করে আছে দীর্ঘদিন থেকে। তার উপর আবার অবৈধ ভাবে দখল করা হচ্ছে। আমদের ব্যবসায়ীরা এখন বসবে কোথায়? এ ভাবে চলতে থাকলে আমাদের রাজস্ব আদায়ে ব্যাঘাত ঘটবে।
জমি দখলের বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত আব্দুর রাজ্জাক দুলাল বলেন, আমরা এই জমি ২০০৪ সালে ক্রয় করেছি। আমরা বিভিন্ন সময়ে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা প্রশাসনের লোকদের কাছে গিয়েছি তারা কেউ আমোদের জমি বুঝিয়ে দেয় নাই। আমরা এই জমির প্রকৃত মালিক। আমাদের জমির দলিল ও খাজনা খারিজ আছে। আমাদেরকে সরকারি সার্ভেয়ার এসে জমি পরিমাপ করে দিয়ে গেছে। এই জমি আমাদের ছেড়ে দিতেই হবে। জমিতে সরকারি স্থাপনা থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, সরকার এগুলো ভূল করে নির্মাণ করেছে।
ইউপি চেয়ারম্যান একরামুল হক চেীধুরী জানান, ইউনিয়ন পরিষদের মালিকানা জমি দখল হয়েছে মর্মে অবগত হয়েছি। পরে প্রতিকার চেয়ে আমি আবেদন করেছি। এখন প্রশাসন ব্যবস্থা নিবে আশা করি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিমলা উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা বেলায়েত হোসনে বলেন, আমরা ইউনিয়ন পরিষদের সরকারি জমি পরিমাপ করেছি। আমরা কারও ব্যক্তিগত জমি পরিমাপ করে দেই নাই। সার্ভেয়াকে দিয়ে বেসরকারি বা ব্যাক্তি মালিকানা জমি মাপার কোন সুযোগ নেই।
অভিযোগ পাওয়ার কথা জানিয়ে জেলা প্রশাসক পঙ্কজ ঘোষ জানান, তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।