নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলায় শেখ রাসেল মিনি ষ্টেডিয়ামের তিনতলা ভবন ও গ্যালারী নির্মানে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। তিনতলা বিশিষ্ট প্যাভিলিয়ন ভবন ও গ্যালারীর ঢালাইকাজে ব্যবহার করা হচ্ছে নিম্নমানের সামগ্রী। এমন অভিযোগ করেছেন উপজেলার ক্রীড়ামোদি সাধারন মানুষ ও জনপ্রতিনিধিগন।
প্রকল্প এলাকায় টাংগানো সাইবোর্ডের তথ্যানুসারে জানা গেছে, সরকারের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রনালয়ের অধিনে উপজেলা পর্যায়ে শেখ রাসেল মিনি ষ্টেডিয়াম প্রকল্প(২য় পর্যায়) শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলায় শেখ রাসেল মিনি ষ্টেডিয়াম নির্মানের জন্য ৪ কোটি ৬৯ লাখ ১৭ হাজার ৫৫৯ টাকা চুক্তিমুল্য ধরে বরাদ্দ দেয়া হয়। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রনালয়ের বাস্তবায়নে কাজটি করছেন ঠিকাদারী প্রতিষ্টান এম এস এমটি এ্যান্ড এসএস কনষ্ট্রাশন ।
গত শনিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা দেখে , শেখ রাসেল মিনি ষ্টেডিয়ামের তিনতলা বিশিষ্ট প্যাভিলিয়ন ভবনের গ্রাউন্ড ফ্লোরের ৪ ইঞ্চি আরসিসি ঢালাইয়ের কাজ চলছে। এসময় দেখা যায়, গ্রাউন্ড ফ্লোরের ঢালাইয়ের সলিংয়ে নিম্মমানের ভাংগাচোরা ও নিম্নমানের ইট ব্যবহার করা হয়েছে। ঢালাইকাজের সময় সংশ্লিষ্ট দপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলী, উপজেলা ক্রীড়া পরিষদের সদস্যবৃন্দের উপস্থিতিতে ঢালাইকাজে ব্যবহৃত উপকরন সমুহ পানি ছিটিয়ে পরিস্কার করে ঢালাইকাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা। কিন্তু ঢালাইয়ের সময় সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কেউ উপস্থিত না থাকায় নির্মান শ্রমিকরা কাজের সিডিউল অনুযায়ী ঢালাইয়ের রেসিও মেইনটেন্যান্স না করে যেনতেনভাবে ঢালাইকাজ সম্পন্ন করছেন। ঢালাইয়ের সময় সাংবাদিকরা উপস্থিত হলে ঢালাইকাজে নিয়োজিত শ্রমিকরা ঢালাই বন্ধ করে দেন। এর কিছুক্ষন পরে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের উপ সহকারী প্রকৌশলী আব্দুল মাজেদ, ঠিকাদারী প্রতিষ্টানের কনসাল্ট ইঞ্জিনিয়ার মোঃ ইমরান হোসেন এসে আবারো ঢালাই কাজ শুরু করেন।
ষ্টেডিয়াম সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা হাকিনুজ্জামান বলেন, শেখ রাসেল মিনি ষ্টেডিয়ামের গ্যালারী নির্মানের সময় নিম্নমানের পাথর ও বালু ব্যবহার করা হয়েছে। এ নিয়ে প্রতিবাদ করলে ঠিকাদারের লোকজন আমার উপর চড়াও হয়। আমি বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে জানিয়েছি পরে তিনি কি ব্যবস্থা নিয়েছেন আমি জানিনা।
কিশোরগঞ্জ সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী গ্রেনেট বাবু বলেন, শেখ রাসেল মিনি ষ্টেডিয়ামের নির্মান কাজে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি হচ্ছে। ষ্টেডিয়াম ভবন নির্মানে যথাযথ নিয়ম অনুসরন করা হচ্ছেনা। ভবন নির্মান কাজে স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যাক্তির হস্তক্ষেপের কারনে এমন অনিয়ম হচ্ছে। ফলে ভবনের স্থায়ীত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্যাক্তি জানান, নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করে প্যাভিলিয়ন ভবনটি দুই ও তিনতলা রাতে ঢালাই করা হয়েছে।
ক্রীড়া পরিষদের উপ সহকারী প্রকৌশলি আব্দুল মাজেদ জানান, শেখ রাসেল মিনি ষ্টেডিয়ান নির্মানের স্টিমেট অনুযায়ী এখানে তিনতলা বিশিষ্ট একটি প্যাভিলিয়ন ভবন, ৫ ধাপ বিশিষ্ট ৩শ ফিট গ্যালারী, মাঠের চারিদিকে আরসিসি ড্রেন, মাটি ভরাট,ওয়াক এ্যওয়ে নির্মান,গাছ লাগানো ও ভবনের সামনে আরসিসি রাস্তা তৈরী করন কাজ করা হবে। ঢালাই কাজের অনিয়মের বিষয়ে বললে তিনি বলেন, ইষ্টিমেটের রেসিও অনুযায়ী ঢালাই করা হচ্ছে। নিম্নমানের পাথর, ইট, ২ পয়েন্ট ৫ এফ এমের বালু না দিয়ে লোকাল বালু এবং সলিংয়ে নিম্নমানের ইট ব্যবহারের বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল ইট,বালু ও পাথর সরবরাহ করছে। তাঁরপরও আমি ইষ্টিমেট অনুযায়ী সবকিছু করছি। নিম্নমানের উপকরনের বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, শতভাগ সিউিউল ফলো করা অনেক সময় সম্ভব হয় না ।
কনষ্ট্রাকশন ফার্মের কনসাল্ট ইঞ্চিনিয়ার ইমরান হোসেন বলেন, স্থানীয় কিছু লোক ইট দিচ্ছে। ইট আসার সময় কিছু খারাপ ইট চলে আসে। খারাপ ইট ফেলে না দিয়ে ঢালাইয়ের সলিংয়ে ব্যবহার করছেন কেন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ইটগুলো ফেলে দেওয়ার উপযোগী নয় তাই ব্যবহার করা হয়েছে।
উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারন সম্পাদক মোঃ সুমন শাহ বলেন, ঢালাইয়ের কাজে নিয়ে আসা নিম্নমানের একটি পাথরের ট্রাক আমি ফিরিয়ে দিয়েছি। নির্মানকাজে নিম্নমানের ইট ও বালু ব্যবহারের বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ভাই ষ্টেডিয়ামের বাউন্ডারী ওয়াল নির্মানে নিম্নমানের ইট নিয়ে আসার কারনে ইউএনও স্যারকে বলে ওয়াল নির্মান কাজ বন্ধ রেখেছি। ভবন নির্মানে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের বিষয়ে তিনি বলেন, ভবন ও গ্যালারীর নির্মাকাজের জন্য নিয়ে আসা নিম্নমানের পাথর ও ইটের ট্রাক ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে। ঢালাইকাজে সেগুুলা ব্যবহার করা হয়নি। তিনি সাংবাদিকদের এগুলো নিয়ে লেখালেখির না করার জন্য বলেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি নুর-ই আলম সিদ্দিকী বলেন। শেখ রাসেল মিনি ষ্টেডিয়াম নির্মানে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের কোন সুযোগ নেই । গ্রান্ড ফ্লোর ঢালাইকাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার সিডিউল অনুযায়ী রেসিও না দেয়া ও সলিংয়ে নিম্নমানের ভাংগাচোরা ইট দেয়া হয়েছে জানিয়ে তাৎক্ষনিক বিষয়টি অবগত করলে তিনি বলেন, আমি ইঞ্জিনিয়ারকে বিষয়টি জানাচ্ছি বলে ফোন কেঁটে দেন।