প্রতিদিন কাক ডাকা ভোর হতে গভীর রাত ডিমলা উপজেলার ৯ নং টেপাখড়িবাড়ী তিস্তার বাজার তিস্তা নদীর বালু উত্তোলন পয়েন্ট ৩ নং ডিমলা সদর ইউনিয়ন নটাবাড়ী বড় মসজিদ পয়েন্ট,  শৈল্লান ঘাট, ৬ নং নাউতারা ইউনিয়ন সাতজান নাউতারা নদীর পয়েন্ট, ৭ নং খালিশা চাপানী ইউনিয়ন সিলট্রাপ এবং পূন্নাঝাড় পয়েন্ট,৮ নং ঝুনাগাছ চাপানী ছাতুনামা ও ভেন্ডাবাড়ী সাঁতারুর চৌপথী সোজা পূর্বে এবং ২ নং স্পার পয়েন্ট তিস্তা নদী বালু থেকে শুরু করে গ্রামের ব্যস্ততম সকল রাস্তার সবখানে এই মরণযান অবৈধ ট্রাক্টর (কাঁকড়া) সগৌরবে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। চালকের লাইসেন্স তো দূরের কথা, চালানোর নেই কোনো অভিজ্ঞতা। অল্প বয়সী কিশোরদের হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে কাঁকড়া নামের এসব যন্ত্রদানবের স্টিয়ারিং।

 আইন অমান্য করে তথাকথিত উন্নয়নের কথা বলে এসব অবৈধ টলি চলাচলের ফলে একদিকে যেমন জীবন হারাচ্ছে পথচারী সেই সঙ্গে নষ্ট হচ্ছে সরকারের কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ব্রীজ ও রাস্তাঘাট। বেপরোয়া গতি আর বিকট শব্দে চলাচলকারী অবৈধ ট্রাক্টর ও টলির কারণে ভাঙ্গছে সড়ক, বাড়ছে অনাকাংখিত দুর্ঘটনা। এ যেন রাবন রাজত্ব, এ ব্যাপারে প্রশাসন সুদৃষ্টি কামনাও করছেন অনেকে।

 ডিমলা উপজেলার অলি গলি  সড়ক গুলোতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে মরণযান ট্রাক্টর (কাঁকড়া)। প্রায় দিনই ঘটছে দুর্ঘটনা, প্রতি মুহূর্তে আতঙ্কে থাকছে স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের বাবা-মা। প্রাণ যাচ্ছে নিরীহ অসহায় মানুষের। আর পকেট ভারি করছে প্রভাবশালী ও অসাধু ব্যক্তিরা। আর মাটি পরিবহণে নিয়োজিত রয়েছে প্রায় পাঁচশত  ট্রাক্টর ও পাওয়ারটিলার দিয়ে তৈরী অবৈধ টলি।

 মাটি কাটার পর নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছে দিচ্ছে এসব পরিবেশ বিনষ্টকারী অবৈধ যান। মাটি পরিবহণের সময় ট্রাক্টর থেকে মাটি পড়ে গিয়ে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামীণ সড়ক ও উপজেলার প্রধান প্রধান সড়ক ও গ্রামের রাস্তা ঘাটের বেহাল অবস্থা যা মারাত্মতভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে, সেই সঙ্গে ইউনিয়নের বিভিন্ন সড়কের ওপর ট্রাক্টরের মাটি পড়ে সড়ক নষ্ট হচ্ছে।

এতে যানবাহন চালক ও সাধারণ মানুষ চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। এসব যেনো দেখার কেউ নেই। আইন অমান্য করে মরণযান এ সব অবৈধ ট্রাক্টর রাস্তায় চলাচল করলেও অদ্যাবধি অদৃশ্য কারণে প্রশাসন আইনগত কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন না বলে অভিযোগ করেছেন এলাকার সচেতন নাগরিকগণ।

উচ্চ মাত্রার শব্দে ট্রলি চলাচলের কারনে অতিমাত্রায় শব্দ দূর্ষণ হয়।

যে কারনে সরকার ২০১০ সালে সারাদেশে সব ধরনের ট্রলি চলাচল অবৈধ ঘোষনা করে। এছাড়া ট্রলি আটক করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার ও নিদের্শদেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়। কিন্তু সরকারের এই নিদের্শনাকে মানছেনা কেউই।

যে ট্রাক্টর আমদানি হলো চাষাবাদের জন্য সেই ট্রাক্টর এখন অবৈধ ট্রাক বা পরিবহন হয়ে গ্রামীণ জনপদের ক্ষতি সাধন করছে। গ্রামের কাঁচা সড়কে অবৈধ ট্রাক্টর চলাচলের কারণেই ধূলিকণা সৃষ্টি করে। আর এই ধূলোর মধ্য দিয়ে জনসাধারণ চলাফেরা করায় শ্বাসকষ্ট, সর্দি -কাশি রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের প্রায় কাঁচা-পাকা রাস্তাঘাটের বর্তমান পরিস্থিতি আজ এমন।  এখনই যদি এ যন্ত্রদানবকে থামানো না যায় তাহলে মৃত্যুর মিছিল এবং পঙ্গু লোকের সারি আরও অনেক বড় হবে। সন্তান হারাবে তাদের পিতা-মাতা। আর পিতা মাতা হারাবে তাদের আদরের সন্তানদের। মেধাবী শিক্ষার্থী হারা হবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। শোকের মিছিলে পরিণত হবে সড়ক। সেই সঙ্গে সরকারের কোটি কোটি টাকা ব্যয়ের রাস্তাগুলো হচ্ছে চলাচলে অযোগ্য।

 জনসাধারণের চলাচলের রাস্তা যেন মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। শুধু কি তাই, অবৈধ এই যন্ত্রদানব বেপরোয়া গতিতে চলাচলের সময় প্রতিনিয়ত ঘটাচ্ছে শব্দ দূষণও। শব্দ দূষণের কারণেই রাস্তায় চলাচলকারী জনসাধারণ, আশপাশে থাকা গ্রামের মানুষ ও শিক্ষার্থীরা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে।

জানা যায়, উপজেলার প্রতিটি মাটি ও বালি পরিবহনের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে অবৈধ ট্রাক্টর। এ ছাড়াও অনেকেই নিজের বসতবাড়ি করার জন্য ডোবা কিংবা পুকুরে মাটি ভরাট করছেন এসব ট্রাক্টরে মাধ্যমে। আবার দেশে যে কোনো নির্বাচনী হাওয়া বইলে দেখা যায় নির্বাচনের বিভিন্ন সরঞ্জামাদি ভোট কেন্দ্রে আনা নেয়া করেন এই যন্ত্রদানব অবৈধ ট্রাক্টরের (কাঁকড়া) মাধ্যমেই।

অথচ নেই কোনো বৈধ রোডপার্মিট ও গাড়ি চালকের নেই ড্রাইভিং লাইসেন্স। ড্রাইভিং লাইসেন্সের প্রয়োজন না হওয়ায় ১৪-১৮ বছরের কোমলমতি শিশু কিশোরদের দিয়েও ট্রাক্টর চালানো হচ্ছে। ট্রাক্টর-ট্রলি সড়কে চলাচলের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও এ যন্ত্রদানবের চালকরা তা মানছে না। দ্রুতগতির ফলে সড়কগুলোতে প্রতিদিন দুর্ঘটনা লেগেই রয়েছে।

 দুর্ঘটনার শিকার একাধিক আরোহী জানান, প্রতিদিন এসব কাঁকড়া জমি থেকে মাটি নিয়ে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নিয়ে যাওয়ায় কিছু মাটি রাস্তায় পরে যায়, ঘন কুয়াশায় রাস্তায় পরে থাকা মাটি খুবই পিচ্ছিল হয়ে থাকে ফলে প্রতিদিন অসংখ্য মোটরসাইকেল চালক দুর্ঘটনার কবলে পড়ছে এবং ইতোমধ্যে অনেকে পঙ্গুত্ববরণ করেছে। 

 এখনই যদি এ যন্ত্রদানবকে থামানো না যায় তাহলে মৃত্যুর মিছিল এবং পঙ্গু লোকের সারি আরও অনেক বড় হবে। সন্তান হারাবে তাদের পিতা-মাতা। আর পিতা মাতা হারাবে তাদের আদরের সন্তানদের। মেধাবী শিক্ষার্থী হারা হবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। শোকের মিছিলে পরিণত হবে সড়ক। সেই সঙ্গে সরকারের কোটি কোটি টাকা ব্যয়ের রাস্তাগুলো হচ্ছে চলাচলে অযোগ্য।

এ বষয়ে ডিমলা উপজেলা  চেয়ারম্যান বীর মুক্তি যোদ্ধা তবিবুল ইসলাম জানান, সব ধরনের অবৈধ ট্রাক্টর চলাচলের উপর নিষেধাজ্ঞা স্বত্ত্বে অসাধুরা অবৈধ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। মাসিক মিটিং অবৈধ ট্রাক্টরের পরিবেশ বিধংসী অনৈতিক কর্মকান্ড বন্ধে আলোচনা রাখবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন।