সৈয়দপুর প্রতিনিধি
নারীরা কারিগর ও মালিক। নিজেরা তৈরি করছেন চটের আকর্ষণীয় ব্যাগ। স্ত্রিন প্রিন্ট থেকে প্যাকেজিং সবকিছুই করছেন নারীরা। নারী হাতের ছোঁয়ায় তৈরি এসব ব্যাগ যাচ্ছে ইউরোপ ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশে। নারী কারিগররা বছর শেষে লাভ্যাংশ পাচ্ছেন। যা দিয়ে পরিবার কে স্বাবলম্বী করছেন। অফিস ও কিছু কাছে পুরুষ কর্মীরা রয়েছেন হতে গোনা।
নীলফামারীর সৈয়দপুর শহরের গোলাহাট এলাকায় সৈয়দপুর এন্টারপ্রাইজেস নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠে। ১৯৯৫ সালে ৬তলা এই ভবনটি অসহায় ও দুস্থ নারীদের জমাকৃত অর্থে গড়ে উঠে। এর আগে বিচ্ছিন্নভাবে সমাজের অবহেলিত এসব নারী কাজ করে নিজেরদের তৈরি করেন। এর সদস্য সংখ্যা প্রায় ১৬০ জন। এরা এখানে কাজ করেন এবং বাড়িতে নিয়ে যান বিভিন্ন ব্যাগ তৈরির উপকরণ। প্রতিটি নারী ব্যাগ তৈরি করে প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৬০০ টাকা আয় করেন।
প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিল্পী রানী ও ফাতেমা বেগম। আসেন শহরের নতুন বাবুপাড়া থেকে। এখানে কাজ করে সংসার ভালই চলছে। বছর শেষে মোটামুটি লাভ্যাংশ মেলায় জমি-জমি কেনা ও ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়াও করাতে পারছি। পরিবারে স্বচ্ছলতা ফিরে এসেছে। এখানে কাজ করায় এনজিও’র ঋনও নিতে হচ্ছে না। আমরা নিজেরাই মালিক কর্মচারী এই প্রতিষ্ঠানে।
প্রতিষ্ঠানটির অ্যাসোসিয়েট ম্যানেজার আরমান আলী জানান, এখানে বাজার ব্যাগ, লন্ড্রি ব্যাগ, ডল ব্যাগ, লাঞ্চ ব্যাগ, কসমেটিক ব্যাগসহ পুরাতন শাড়ি কাপড়ের ব্যাগ তৈরি করে থাকে নারীরা। ব্যাগগুলো মজবুত, টেকসই ও উন্নতমানের। ঢাকা থেকে উন্নতমানের পাটের চট সংগ্রহ করে এসব ব্যাগ তৈরি করা হয়। অর্ডার অনুযায়ী ব্যাগগুলো আমেরিকা, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ড, জাপান, কুরিয়া, হংকং, তাইওয়ান, জার্মানিসহ বিভিন্ন দেশে পাঠানো হয়।
প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজার (হিসাব) ইশতিয়াক আহমেদ বলেন, প্রতিষ্ঠানটির নারীদের তৈরি ব্যাগ রপ্তানি করে গেল অর্থবছরে সাড়ে ৪ কোটি টাকা আয় করেছে। করোনার কারণে বাজার কিছুটা খারাপ গেছে। এবারে প্রায় ৫ কোটি টাকা আয় ছাড়িয়ে যাবে বলে জানান। প্রতিষ্ঠানটির প্রতিটি তলায় কাজ করেন নারীরা। কাটিং, সেলাই, স্ক্রীন প্রিন্ট, বোতাম লাগানো নারীরা সুক্ষ হাতে করে থাকেন। এসব নারীরা পিস হিসাবে মজুরী ও বছর শেষে লাভ্যাংশ পেয়ে থাকেন।
এ প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার (সেলস ও মার্কেটিং) রাশেদ আহমেদ বলেন, আমরা মুলত কম্পিউটারে ডিহাইন দেখাই কিংবা তাঁদের চাহিদা ও ডিজাইন অনুযায়ী ব্যাগ সরবরাহ করে থাকি। আমাদের তৈরি ব্যাগগুলো মুলত পানি জাহাজে পাঠিয়ে থাকি। আগে ৩৫ দিন লাগলেও এখন সময় লাগছে ৭০ থেকে ৭৫ দিন। এতে ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে এবং বায়ারদের আগ্রহ কমছে।
সৈয়দপুর এন্টারপ্রাইজেসের জেনারেল ম্যানেজার মাসুম ইবনুল খান সবদিকে নজর রাখেন। তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠানটি মুলত সমাজের অবহেলিত ও পিছিয়ে পড়া নারীদের। অসহায়, দুস্থ নারীরা কাজ করেন। পাটশিল্পের ব্যাগ তৈরি করে সমাজে অবদান রাখছেন। তাঁরা কাজে খুবই আন্তরিক। ফলে প্রতিষ্ঠানটি জনপ্রিয়তার উচ্চ শিখরে পৌঁছেছে। এই প্রতিষ্ঠানটিতে শতকরা ৯০ ভাগ নারী ও ১০ ভাগ পুরুষ অফিসের কাজ করেন। ৬০ বছর বয়স হলে তাঁদের বাদ দিয়ে নতুন করে বাছাই করে নারীদের নিয়োগ করা হয়। একাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি থাকে।
স্টাফ রিপোর্টার
